‘নাথুরামকে দিয়ে ক্ষুদিরামকে অপমানিত হতে দেব না’, বাংলা নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা তৃণমূলের
প্রতিদিন | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা ও বাঙালি নিয়ে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ‘বাংলা-বিরোধী’ বিজেপিকে কার্যত তুলোধোনা করল তৃণমূল। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় থেকে ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা তুলে ধরলেন বাংলার গর্বের ইতিহাস। বুঝিয়ে দিলেন, গেরুয়া শিবির নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আগলে রাখতে ডাহা ফেল। তৃণমূল তা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। শাসকদলের বিধায়কদের কথায়, “বাংলার ক্ষুদিরামকে আমরা নাথুরামকে দিয়ে অপমানিত হতে দেব না।”
পূর্বঘোষণামতো মঙ্গলবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে পেশ হয়েছে বাঙালি ‘হেনস্তা’ বিরোধী প্রস্তাব। তা নিয়ে আলোচনাতেই বাকযুদ্ধে জড়াল তৃণমূল-বিজেপি। ফিরহাদ হাকিম বললেন, ”বাংলা বললেই আমরা বাংলাদেশি? আমরা ভারতীয় বাঙালি। বিজেপি বাংলা বিরোধী। ব্রিটিশরা যখন বাংলা ভাগ করে, তখন থেকে বিজেপি মানুষের মনে বরাবর ঘৃণা জাগিয়ে রাখতে চেয়েছে। আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। ব্রিটিশদের দালালি করেছেন আপনারা।” বাম থেকে বিজেপিতে এসে বিধায়ক হওয়া শংকর ঘোষকে উদ্দেশ্য করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ”শঙ্কর ঘোষ যে দলে ছিলেন তখনও রবীন্দ্রনাথকে বলেছেন ‘বুর্জোয়া’ কবি, আজ যে দলে আছেন সেই দলও কবিগুরুকে অপমান করছেন ধর্মীয় অন্ধকারে দেশকে পুঁতে রাখতে চাইছেন। ছিঃ, দেশকে আপনারা পিছিয়ে দিতে চাইছেন।” ব্রাত্য বসু বলেন, ”উর্দু ভাষা ভারতীয় ভাষা, সপ্তম শিডিউলে স্বীকৃত। এই ভাষাকে অসম্মান করবেন না। এখন বাংলাকে উপভাষা বলে দাগিয়ে দেওয়ার হচ্ছে। বাংলার ঐতিহ্য গরিমা ওরা জানে না, আসলে বাংলাকে ভয় পায়।”
জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় স্তোত্রের নেপথ্যে বাঙালি স্রষ্টাদের অবদান মনে করিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। দিন কয়েক আগেই বঙ্গ বিজেপির সহকারী পর্যবেক্ষক তথা বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বাংলা ভাষার অস্তিত্ব নিয়েই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর মতে, বাংলা আলাদা কোনও ভাষা নেই। এনিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। এবার বিধানসভাতেও ফের সেই রেশ আছড়ে পড়ল। অমিত মালব্যকে খোঁচা দিয়ে চন্দ্রিমার কটাক্ষ, “জনগণমনকে ‘ব্রাহ্ম মন্ত্র’ বলে টুইট করছেন মালপোয়া (মালব্য) নামে বিজেপির একজন। তিনি জানেনই না এটা বাংলা ভাষা।”
তিনি আরও জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘জনগণমন’র প্রথম স্তবকটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয় ১৯৫০ সালে ২৪ জানুয়ারি। এই তথ্য উল্লেখ করে তার দ্বিতীয় স্তবক ‘অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত’ বিধানসভায় পাঠ করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এরপর অমিত মালব্যর প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ”একটু জেনে টুইট করতে হবে। না হলে দেশ থেকে কুইট করতে হবে।” সবমিলিয়ে, রাজনৈতিক যুদ্ধে নেমে বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্গে এখনও মানিয়ে নিতে না পারা গেরুয়া শিবিরকে উত্তরোত্তর কোণঠাসা করার অস্ত্রে আরও শান দিচ্ছে তৃণমূল।