• শমীকের ‘দরবারি’ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে বুধবার, মেরামতির মাঝেই মুরলীধর লেনে কর্মীদের কথা সরাসরি শুনবেন রাজ্য সভাপতি
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আর দেরি নয়। বুধবার থেকেই রাজ্য বিজেপির পুরনো সদর দফতরে ‘কর্মী দরবার’ শুরু করে দিচ্ছেন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের বাড়ি থেকে রাজ্য বিজেপির ভরকেন্দ্র কয়েক বছর আগেই সরে গিয়েছে বিধাননগরের সেক্টর ফাইভে। কিন্তু নথিপত্রে নিবন্ধিত ঠিকানা অনুযায়ী বিজেপির রাজ্য সদর দফতর এখনও মুরলীধর সেন লেনেই। সেখানেই শুরু হচ্ছে রাজ্য সভাপতির ‘দরবার’।

    কর্মীদের কথা সরাসরি শোনার জন্য শমীক যে সপ্তাহে এক দিন করে পুরনো সদর দফতরে বসবেন, সে কথা গত ২৮ অগস্টই জানিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। এ বার বিজেপির সমাজমাধ্যম পাতায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণাও করে দেওয়া হল রাজ্য সভাপতির ‘দরবারি’ কর্মসূচির দিনক্ষণ।

    সোমবারই বিজেপি সমাজমাধ্যমে জানিয়েছে শমীকের কর্মসূচির কথা। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য আগামী ৩ সেপ্টেম্বর, দুপুর ২টোয় রাজ্য বিজেপির প্রধান কার্যালয় ৬, মুরলীধর সেন লেনে উপস্থিত থাকবেন।’ বিজেপির পুরনো সদর দফতরটিতে এখন বড়সড় মেরামতি চলছে। বাড়িটিকে প্রায় ঢেলে সাজা হচ্ছে। সেই কাজ শেষ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তার পরেই শমীক ‘কর্মী দরবার’ শুরু করবেন বলে বিজেপি সূত্রের প্রথমে জানা গিয়েছিল। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি সে কর্মসূচি আর ঝুলিয়ে রাখতে চাইছেন না। তাই পুরনো রাজ্য দফতরে সিমেন্ট-বালি-সহ নানান নির্মাণ সামগ্রীর রাজত্বের মাঝেই জায়গা তৈরি করা হয়েছে। একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে বসে কথা বলার ব্যবস্থা বা একান্ত বৈঠক, দু’রকম বন্দোবস্তই রাজ্য সভাপতির জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে মুরলীধর সেন লেনে।

    শমীকের এই কর্মসূচির জন্য পুরনো দফতরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বার্তাও গিয়েছে সেক্টর ফাইভ থেকে। প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় মুরলীধর সেন লেনের দফতরে গিয়ে সে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তার পরেই ছকে নেওয়া হয়েছে, কোন ঘরে রাজ্য সভাপতি অনেককে নিয়ে বসতে পারবেন, কোন ঘরে একান্ত বৈঠক করতে পারবেন।

    রাজ্য বিজেপির কয়েক জন পদাধিকারী সপ্তাহখানেক আগেই নিজেদের ব্যক্তিগত সমাজমাধ্যম পাতায় শমীকের এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবার’। ১ সেপ্টেম্বর থেকে শমীক এই কর্মসূচি শুরু করবেন এবং প্রতি সপ্তাহে এক দিন করে পুরনো রাজ্য দফতরে বসবেন বলে সে সব পোস্টে লেখা হয়েছিল। কিন্তু দলের নতুন রাজ্য কমিটি এখনও গঠিত হয়নি। পুরনো দফতরের মেরামতিও শেষ হয়নি। তাই সেপ্টেম্বরের শুরুতেই শমীক এই ‘কর্মী দরবার’ শুরু করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। ফলে বিজেপি নেতারা আসন্ন কর্মসূচির কথা সমাজমাধ্যম থেকে সরিয়ে দেন। তবে এ বার আর কারও ব্যক্তিগত পোস্টে নয়, দলের তরফ থেকেই রাজ্য সভাপতির এই কর্মসূচির কথা সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সভাপতির ‘দরবার’ শুরু হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

    রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও বিজেপিকর্মীর অভাব-অভিযোগ বা পরামর্শের কথা সরাসরি শুনতে সভাপতির ‘দরবার’ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে এর আগে হয়নি। এমন প্রয়াস এই প্রথম। বঙ্গ বিজেপিতে কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসা নতুন নয়। নতুন কমিটি বা বিভিন্ন স্তরে নতুন নেতৃত্বের তালিকা প্রকাশিত হলেই বিজেপির অভ‍্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। চলতি বছরেও জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষিত হওয়ার পরে একাধিক জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি আক্রান্তও হয়েছেন কর্মীদের একাংশের হাতে। পক্ষান্তরে, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কর্মীদের কোনও কোনও অংশকে কোণঠাসা করার অভিযোগও ওঠে। কিন্তু কর্মীদের ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’ করার অভিযোগ রাজ‍্য নেতৃত্বের কাছে জেলা বা মণ্ডলের নেতারা যত সহজে পৌঁছে দিতে পারেন, নেতাদের ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ কর্মীরা তত সহজে উপরের স্তরে জানাতে পারেন না। শমীক সেই পরম্পরায় ছেদ টানতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে কোনও কর্মী যাতে চাইলেই সরাসরি সভাপতিকে তাঁর বক্তব‍্য জানাতে পারেন, তিনি সেই ব‍্যবস্থাই করতে চাইছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)