• কলকাতাকে আবার ‘নাবালক’ বানিয়ে দিল মেট্রো! দমদম থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম রাত্রিকালীন পরিষেবা এক বছরেই বাতিল
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • দমদম এবং শহিদ ক্ষুদিরামের (ব্লু লাইন) মধ্যে রাত্রিকালীন পরিষেবা এ বার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা মেট্রো। যাত্রী চাহিদার কথা মাথায় রেখে এক বছর আগে এই পরিষেবা চালু করেছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে আর সেই পরিষেবা পাবেন না যাত্রীরা।

    মেট্রোকে কলকাতা শহরের ‘লাইফলাইন’ বলা হয়। যানজট এড়াতে বহু মানুষের পছন্দের তালিকায় পাতালরেল। পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ সত্ত্বেও মেট্রোই ভরসা ছিল অনেকের। যাত্রীদের সুবিধার্থে বছরখানেক আগে ব্লু লাইনের পরিষেবা আরও রাত পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। খুব ‘ধুমধাম’ করে মেট্রোর তরফে রাত্রিকালীন পরিষেবার কথা ঘোষণা করা হয়। অনেকে তখন ঠাট্টার সুরে বলেছিলেন, ‘‘এত দিনে কলকাতা মেট্রো সাবালক হল।’’ তবে বুধবার থেকে আবার ‘নাবালক’ হয়ে গেল কলকাতা মেট্রো।

    গত বছর জুন মাসে মেট্রোর তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে ব্লু লাইনে শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে রাত ১১টায়। তবে শেষ পরিষেবাটি চলবে দমদম এবং কবি সুভাষের মধ্যে। অর্থাৎ রাত্রিকালীন এক জোড়া বিশেষ পরিষেবা চালানোর সিদ্ধান্ত শহরবাসীর একাংশের মনে খুশির হাওয়া বয়ে এনেছিল। দিন কয়েক পরে মেট্রো আবার জানায় বিশেষ পরিষেবার সময়সূচি বদল করছে তারা। সে বারও বলা হয়েছিল, ‘‘যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রাত্রিকালীন পরিষেবার সময় ২০ মিনিট কমিয়ে আনা হচ্ছে।’’ অর্থাৎ, রাত ১১টার পরিবর্তে দমদম এবং কবি সুভাষ— উভয় প্রান্তিক স্টেশন থেকে শেষ মেট্রো ছাড়বে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। কারণ হিসাবে মেট্রো জানিয়েছে, ‘মাত্রাতিরিক্ত খরচ’ এবং তুলনায় ‘খুবই কম আয়’-এর কথা।

    নতুন সূচি মেনে কয়েক দিন মেট্রো চালান কর্তৃপক্ষ। তবে কিছু দিন পরেই তাঁরা আফসোসের সুরে বলতে শুরু করেন, ‘‘রাতের মেট্রোয় যাত্রী হচ্ছে না।’’ কী ভাবে ‘ক্ষতিপূরণ’ করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয় মেট্রোর অন্দরে। অনেক আলোচনার পর ঠিক হয়, রাতের বিশেষ মেট্রোর ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। বিবৃতি জারি করে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, খুব কম সংখ্যক যাত্রী এই পরিষেবা ব্যবহার করছেন। তাই দূরত্ব-নির্বিশেষে পরিষেবার প্রতিটি টিকিটের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ টাকা সারচার্জ যোগ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থাৎ টিকিটের ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ টাকা গুনতে হবে প্রত্যেক যাত্রীকে। চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে শেষ মেট্রোর ভাড়া ১০ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

    রাত্রিকালীন মেট্রোর ভাড়া বাড়লেও পরিষেবা নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলেন না যাত্রীরা। তাঁদের মতে, রাতের শেষ মেট্রো দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে ছাড়ে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে। আর রাত্রিকালীন বিশেষ পরিষেবা পাওয়া যায় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। ফলে ৯টা ৪৫ মিনিটের মেট্রো না পেলে তাঁকে ৫৫ মিনিট বসে থাকতে হয়। মধ্যবর্তী স্টেশনের ক্ষেত্রে অপেক্ষা গড়াত আরও রাত পর্যন্ত।

    যাত্রীদের একাংশের মতে, শেষ মেট্রো এবং রাতের বিশেষ মেট্রোর মধ্যে সময়ের এতটা ফারাক থাকলে আদতে যাত্রীদের কোনও লাভ হয় না। যাত্রীদের কথায়, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই যাত্রীদের সুবিধার কথা ভাবেন, তা হলে তাঁদের ৯টা ৪৫-এর পরে অত দেরিতে বিশেষ মেট্রো না চালিয়ে আরও আগে এগিয়ে আনা উচিত।’’ কিন্তু যাত্রীদের আক্ষেপেও পরিষেবার সময়সূচি বদল করেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তবে মাঝেমাঝেই যাত্রীসংখ্যা কম হওয়া নিয়ে ‘অভিযোগ’ করতেন। যদিও পুরোপুরি রাত্রিকালীন বিশেষ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে, তা কল্পনা করতে পারেননি অনেক নিত্যযাত্রীই।

    রাত্রিকালীন মেট্রো পরিষেবা বৃদ্ধি করার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়েরও হয়েছিল। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। মামলাকারীর আবেদন ছিল, শেষ মেট্রোর সময় আরও বাড়িয়ে দিন কর্তৃপক্ষ। শুনানির মাঝে কলকাতার মেট্রো পরিষেবা নিয়ে আফসোসও করতে শোনা গিয়েছিল প্রধান বিচারপতিকে। দেশের অন্যান্য বড় শহরে রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পাওয়া গেলে, কলকাতার মতো ব্যস্ত শহরে কেন নয়? উঠেছিল সেই প্রশ্নও। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্য বলেছিল হাই কোর্ট। তবে পরিষেবা তো বাড়লই না, বরং উল্টে রাত্রিকালীন পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)