বাঘের ঘরেই ঘোঘের বাসা! আকাশপথে কোটি কোটি টাকার সোনা রপ্তানিতে জালিয়াতি করছেন শুল্ক কর্তারাই?
আজকাল | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমে উর্দ্ধমুখী সোনার দাম। মাথায় হাত মধ্যবিত্তের। তার মাঝেই সোনা নিয়ে বড় তথ্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বিরাট সোনা জালিয়াতির চক্র ফাঁস করেছে বলে খবর সূত্রের। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, চেন্নাই বিমানবন্দর কার্গোতে বিশাল সোনা রপ্তানি জালিয়াতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) একটি প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) নথিভুক্ত করেছে, যেখানে কাস্টমস কর্মকর্তা এবং গয়না ব্যবসায়ীদের একটি জোট ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বার্ষিক ১,০০০ কোটি টাকারও বেশি সোনা রপ্তানি করে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ।
এফআইআরে ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন কাস্টমস কর্মকর্তা, একজন গয়না মূল্যায়নকারী, একজন কাস্টমস এজেন্ট এবং চারজন সোনার গয়না প্রস্তুতকারক রয়েছেন। এই ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট জে. সুরেশকুমার, অলোক শুক্লা এবং পি. তুলাসিরাম, গয়না মূল্যায়নকারী এন. স্যামুয়েল, কাস্টমস এজেন্ট মারিয়াপ্পান এবং নির্মাতা দীপক সিরোয়া, সন্তোষ কোঠারি, সুনীল পারমার এবং সুনীল শর্মা।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা শুল্কমুক্ত আমদানি অনুমোদন (DFIA) প্রকল্পের অধীনে ২৪ ক্যারেট সোনার বার আমদানি করেছিলেন, যার অধীনে পুনঃরপ্তানীর জন্য বারগুলিকে ২২ ক্যারেটের অলঙ্কারে রূপান্তরিত করার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, সূত্রের খবর তেমনটাই। একইসঙ্গে অভিযোগ, তাঁরা সোনার প্রলেপ দেওয়া পিতল ও তামার অলঙ্কার বা নিম্নমানের অলঙ্কার রপ্তানি করেছেন। এতে সরকারি কোষাগারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও তথ্য।
এই চক্রের খোঁজ প্রথম আসে ২০২২ সালে, যখন সেন্ট্রাল রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (সিআরআই) উপসাগরীয় দেশগুলিতে পাঠানো চালানের বিল অফ ল্যাডিংয়ে অসঙ্গতি খুঁজে পায়। তথ্যের গরমিল উঠে আসায় শুরু হয় তদন্ত। তখনই সোনার গয়নার পরিবর্তে জাল বা নিম্নমানের অলঙ্কার পাওয়া যায় বলে খবর সূত্রের। ব্যাপক জালিয়াতির আভাস পেতেই সিআরআই তখন সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করে। যদিও কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার নিষেধাজ্ঞা মামলাটিকে বিলম্বিত করেছিল বলে জানা যায়।
তবে সম্প্রতি সেই অনুমতি পাওয়া গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে সংস্থাটি পুনরায় তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে, সিবিআই-এর তদন্তকারী আধিকারিকরা চেন্নাই বিমানবন্দর কাস্টমস কার্গো অফিস, পল্লাভারম, আলানদুর, নাঙ্গানাল্লুর এবং আন্না নগরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বাসভবন, পাশাপাশি ফুল বাজার, সোকার্পেট এবং কন্ডিথোপে গয়নার দোকান এবং নির্মাতাদের অফিসে তল্লাশি চালান। কর্মকর্তারা কার্গো টার্মিনালে সোনার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত XRF স্পেকট্রোমিটারও পরীক্ষা করেছেন এবং অপরাধমূলক নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন বলে খবর সূত্রের। সূত্রের খবর, বিরাট জালিয়াতি চক্র প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, এই মামলা কাস্টমস চেকের পদ্ধতিগত দুর্বলতা এবং বাণিজ্য সুবিধা প্রকল্পের অপব্যবহারকেই প্রকাশ্যে এনেছে।
এই মামলায় প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনও জারি রয়েছে। এই সোনা পাচার প্রসঙ্গে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে আরও ব্যক্তিকে তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে। এই কেলেঙ্কারিটি দেশের বিমানবন্দর কার্গো পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বৃহত্তম আর্থিক অপরাধগুলির মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।