মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটে মগ্ন, সঙ্গে থাকছে প্রত্যাশার চাপ, তাই কি এগিয়ে আসছে মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময়? কী বলছেন চিকিৎসকরা?...
আজকাল | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিভাস ভট্টাচার্য: স্কুল থেকে আগেই ফিরেছিল ছাত্রী। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে মাকে সে জানিয়েছিল বারবার তার অন্তর্বাস ভিজে যা চ্ছে। অবাক হয়ে মা যখন পরীক্ষা করেন তখন দেখতে পান তাঁর সাত বছরের মেয়ের ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ বয়স অনুযায়ী এটা হওয়ার কথা নয়। সেদিন সন্ধেবেলায় স্থানীয় একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে মেয়েকে নিয়ে গেলে তিনি সব শুনে প্রশ্ন করেছিলেন মেয়ে কতক্ষন মোবাইল ফোন ঘাঁটে? এরপরেই মেয়েটির ওজন পরীক্ষা করে দেখা যায় তার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। চিকিৎসক জানিয়ে দেন সত্যি সত্যিই তার মেয়ের ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গিয়েছে এবং বর্তমান দিনের আধুনিকতার ছোঁয়ায় গোটা বিশ্বেই এই ঋতুস্রাবের সময়টা অনেক বেশি এগিয়ে এসেছে। এখন সাত বছরের কন্যার মধ্যেও এই জিনিসটা শুরু হয়ে যাচ্ছে।
কেন এই পরিবর্তন? রাজ্যের অন্যতম বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডাঃ আর এন মণ্ডল এবিষয়ে জানিয়েছেন, 'সেভাবে দেখতে গেলে ঋতুস্রাব শুরুর এই আদর্শ সময়টা হল ১২ থেকে ১৩ বছর। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা এখন এগিয়ে আসছে। আসলে বর্তমান এই আধুনিক যুগে লেখাপড়া বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটা বড় মাধ্যম। যার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা তথ্য জানতে পারি। এখন প্রায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। যার মাধ্যমে তারা যেমন লেখাপড়া করছে তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন জিনিস নিয়ে জ্ঞানলাভও করছে। ফলে ৮০ বা ৯০ দশকের কিশোরীদের মানসিক গঠনের সঙ্গে বর্তমান সময়ের কিশোরীরা মানসিকভাবে অনেকটাই 'অ্যাডভান্সড' বা এগিয়ে রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে তাদের শরীরে। অজান্তেই 'হরমোনাল চেঞ্জ' হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তাদের ঋতুস্রাবও এগিয়ে আসছে।'
এর পাশাপাশি আরও যে একটি বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন সেটি হল বাবা বা মায়ের সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া প্রত্যাশার চাপ। ডাঃ আর এন মণ্ডলের কথায়, 'এখন শিশুদের কাঁধে অনেক বেশি বইয়ের বোঝা। স্কুল থেকে এসেই তাদের ছুটতে হচ্ছে অমুক বা তমুক শিক্ষক বা কোচিং সেন্টারে। বাড়িতে তাদের বাবা বা মা তার কানের কাছে প্রতিনিয়ত তার কানের কাছে আওড়ে যাচ্ছেন, 'তোমাকে কিন্তু পরীক্ষায় আরও ভালো ফল করতে হবে'। যেটা শুনে সে একদিকে যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ছে তেমনি তার মাথায় ঘুরছে যদি ভালো ফল না হয় তবে তো বাবা-মা রেগে যাবে। এই যে চাপ সেটা কিন্তু তার শরীরের ভিতরেও নানা পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে। তার মধ্যে একটি হল ঋতুস্রাব এগিয়ে আসা।'
এই পড়াশোনার চাপে তো একজন শিশু বা কিশোরী ঠিকমতো খেলাধুলা করারও সময় পাচ্ছে না। এর জেরে কি তার সমস্যা হচ্ছে না? ওই চিকিৎসকের কথায়, 'অবশ্যই হচ্ছে। একদিকে তার মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে প্রত্যাশার চাপ অন্যদিকে তার শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা। এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় হল তার খাদ্যাভাস। মফস্বল বা শহরে এই মুহূর্তে 'ফাস্টফুড'-এর দোকানের ছড়াছড়ি। মুখে ভালো লাগছে বলে অনেকেই নিয়মিত এই খাবার খায়। এর ফলে শরীরের ক্ষতিটা দিনদিন বাড়তে থাকে। পাশাপাশি এই ধরনের খাবার শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়। যেটা কিন্তু খুবই খারাপ। আমাদের মনে রাখতে হবে স্থুলতা শরীরের অনেক সমস্যা তৈরি করে। একজন কিশোরীর যদি স্বাভাবিকের থেকে শরীরের ওজন বেশি হয় তবে কিন্তু শুধুমাত্র তার ঋতুস্রাব এগিয়ে আনবে না। তৈরি করবে নানা সমস্যা।'