জনগণের জন্য বরাদ্দ শৌচাগার নিজের বাড়িতেই নির্মাণ করে ফেললেন এই পঞ্চায়েত প্রধান...
আজকাল | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এবছর মে মাসের সাগরদিঘি ব্লকের কাবিলপুর পঞ্চায়েতের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল একটি ‘কমিউনিটি টয়লেট’ তৈরি করার জন্য। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ওই পঞ্চায়েতের বাম-কংগ্রেসের নির্বাচিত জোটের প্রধান রোজিনা বিবি সরকারি জমিতে ‘কমিউনিটি টয়লেট’ তৈরি করার পরিবর্তে নিজের বাড়িতেই ওই শৌচাগারের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
গোটা ঘটনাটি নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম সরব হতেই সাগরদিঘির বিডিও সঞ্জয় সিকদার জানিয়েছেন, ‘সরকারি অর্থ নির্মিত শৌচাগার কারও ব্যক্তিগত জায়গায় তৈরি করা যাবে না। যদি কেউ এই ধরনের কাজ করে থাকেন সরকারের তরফ থেকে শৌচাগারে জন্য বরাদ্দ অর্থ তিনি পাবেন না।’
সূত্রের খবর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৫ আসন বিশিষ্ট কাবিলপুর পঞ্চায়েতে বামেদের প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান রোজিনা বিবি। পরবর্তীকালে তিনি কংগ্রেস এবং অন্য কিছু রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা নিয়ে প্রধানের পদে আসীন হন।
মুর্শিদাবাদ জেলার বাম রাজনীতিতে রোজিনা বিবির পরিবার বহু পরিচিত একটি নাম। তাঁর শ্বশুরমশাই প্রয়াত জয়নাল আবেদিন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে চারবার সিপিআই(এম) সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, রোজিনা প্রধান পদে বসার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সাগরদিঘি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নূরে মেহবুব আলম বলেন, “কাবিলপুরের প্রধান আমার হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকায় আমি তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করাইনি।”
তৃণমূল ব্লক সভাপতি বলেন, “আমি শুনেছি ওই প্রধান নিজের পদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি ‘কমিউনিটি টয়লেট’ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা দিয়ে নিজের বাড়িতে সেই টয়লেট তৈরি করছেন। এই কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা প্রশাসনকে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই বছর মে মাসে কাবিলপুর পঞ্চায়েতের তরফ থেকে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ১৩৫ টাকা বরাদ্দ করা হয় ওই ‘কমিউনিটি টয়লেট’ তৈরি করার জন্য। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে বামেদের প্রতীকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান নিজের বাড়িতেই ওই টয়লেট নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই শৌচাগার তৈরির কাজ বেশ কিছুটা শেষ হয়ে গিয়েছে।
তবে এই ‘অবৈধ’ কাজের সপক্ষে অদ্ভুত যুক্তি পেশ করেছেন রোজিনা বেগম। তিনি বলেন, “আমার বাড়ির পাশ দিয়ে পুলিশ-প্রশাসন স্থানীয় স্বয়ংভর গোষ্ঠীর বহু লোকজন বিভিন্ন কাজে যায়। এছাড়া বিভিন্ন কাজের জন্য রোজ প্রচুর মানুষ আমার বাড়িতে আসেন। তাঁদের সকলের সুবিধার জন্য আমার বাড়িতে এই সরকারি শৌচাগার তৈরি করা শুরু হয়েছে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ সিপিএমের প্রতীকে জেতার পর থেকেই রোজিনা বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালে কাবিলপুর এলাকায় দুটি গভীর নলকূপ বসানোর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রুজু হয়।
পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তপন আবেদিন বলেন, “কাবিলপুর পঞ্চায়েত এলাকায় এই শৌচাগার তৈরির জন্য কোনও সরকারি জায়গা পাওয়া যায়নি। তাই আমাদের বাড়িতেই সরকারি শৌচাগার তৈরি করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “এর আগেও কাবিলপুর পঞ্চায়েতে সরকারি টাকায় নির্মিত শৌচাগার বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জমিতে তৈরি হয়েছে। কিন্তু তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি!”
পঞ্চায়েত প্রধান রোজিনা বেগম বলেন, “আমার বাড়ির সামনে প্রায় ১৭ ফুট চওড়া একটি রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সেই রাস্তা কোন দিক দিয়ে যাবে তা স্থির না হওয়ার কারণে সকলের সুবিধার জন্য এই সরকারি শৌচাগার আমার বাড়িতেই করা হচ্ছে। তবে সেখানে যাতে সকলের প্রবেশাধিকার থাকে সেই কারণে শৌচাগারের দরজা আমার বাড়ির ভেতরে না করে বাইরের দিকে করা হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমার ব্যক্তিগত জমিতে সরকারি শৌচাগার তৈরির আগে পঞ্চায়েতের প্রায় সমস্ত সদস্য এবং বিডিও-র অনুমতি নিয়েছি।’
যদিও পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যক্তিগত জমিতে সরকারি শৌচাগার তৈরি হলেও এই জমির মালিকানা তিনি কোনওদিনই সরকার বা পঞ্চায়েতকে হস্তান্তরিত করবেন না। তপনবাবু বলেন, “আমার জমির বাজার মূল্য প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। দু-আড়াই লক্ষ টাকার টয়লেটের জন্য আমি কেন এই জমি সরকারকে দিতে যাব?”
তাহলে ব্যক্তিগত জমিতে নির্মিত সরকারি শৌচাগারের দরজা যদি কোনওদিন পঞ্চায়েত প্রধান বন্ধ করে দিতে চান তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন ?সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।