• সর্বকালের রেকর্ড ভাঙার মুখে যমুনার জলস্তর, ভয়ঙ্কর অবস্থা রাজধানীর
    এই সময় | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিপজ্জনক উচ্চতা দিয়ে বইছে যমুনা। মঙ্গলবার রাতে যমুনার নদীর জলস্তর ২০৮.৩৬ মিটারে পৌঁছে গিয়েছে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই যমুনায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সময়ে জলস্তর পৌঁছেছিল ২০৮.৬৬ মিটারে। অর্থাৎ, বর্তমানে সেই বিপজ্জনক সীমা থেকে মাত্র ০.৩০ মিটার নীচ দিয়ে বইছে যমুনা। উজানের ব্যারেজগুলি থেকে ক্রমাগত জল ছাড়ার ফলে আচমকা জলস্তরের এই বৃদ্ধি ঘটেছে।

    এর জেরে পুরোনো রেলওয়ে ব্রিজটি বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বন্যার আশঙ্কায় নিচু এলাকাগুলি থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ এলাকায়। গণেশ মূর্তি বিসর্জনের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

    মঙ্গলবারও দিল্লি রাজধানী এলাকার বহু জায়গায় জল জমে থাকায় তীব্র যানজট ছিল। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ দিন সন্ধ্যায় দিল্লির জনকপুরী এলাকার একটি রাস্তার একটি অংশ ধসে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে একটি ছোট গর্ত তৈরি হয়েছিল। দ্রুত তা প্রায় ১০ ফুট চওড়া গর্তে পরিণত হয়।

    গুরুগ্রামের কাদরপুর গ্রামের কাছে আরাভালি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে আশপাশের গ্রামগুলি ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। নয়ডার সেক্টর ১২৮-এও যমুনার বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে বহু কৃষিজমি ও বসতবাড়ি। সোনিপতে, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে ৪৪ নম্বর জাতীয় মহাসড়ক ডুবে গিয়েছে।

    রাজধানীর বাইরেও পরিস্থিতি সমান ভয়াবহ। ১৯৮৮ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি পাঞ্জাব। রাজ্য সরকারের মতে, ২৩টি জেলায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৩.৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ। ভারী বৃষ্টিপাতের পরে শতদ্রু, বিয়াস-সহ বেশ কয়েকটি নদীর জল বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় ১,৪০০ টিরও বেশি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।

    অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি রাজ্যটি জুড়ে ধস, হড়পা বান দেখা দিয়েছে। ফলে জায়গায় জায়গায় রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর নির্বাচিত কিছু এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য লাল সতর্কতা এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে। চাম্বা, কাংড়া, কুলু এবং মান্ডির মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলিতে তীব্র বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

    উত্তরাখণ্ডেও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় সাতটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বাকি জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অলকানন্দা, যমুনা, ভাগীরথী এবং গঙ্গার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। কেদারনাথ মহাসড়ক-সহ বহু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    বন্যার ফলে উধম সিং নগরের রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছে। নৈনিতালের হ্রদ উপচে পড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বরের পরে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি এখনও সংকটজনক।

    বঙ্গোপসাগর থেকে আসা নিম্নচাপের কারণে রাজস্থানে আগামী পাঁচ দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভরতপুর, জয়পুর, কোটা এবং শেখাওয়াতির মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে তীব্র বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

    জম্মু, কাঠুয়া, রিয়াসি, ডোডা, উধমপুর, রাজৌরি এবং রামবান জুড়ে আগামী ১৪-১৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পীর পঞ্জল পর্বতমালা এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি অল্প সময়ের জন্য তীব্র বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

    মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান, ধস এবং নিচু এলাকায় জল জমার ঝুঁকি রয়েছে। নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ডোডা পুলিশ বন্যার সতর্কতা জারি করেছে।

  • Link to this news (এই সময়)