৫৯৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি, চেরাপুঞ্জিকে টপকে দেশের ‘আর্দ্রতম’ এলাকা কর্ণাটকের সুরলাব্বি
বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিলং: পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থান। ১৮৬১ সালে এই তকমা পেয়েছিল চেরাপুঞ্জি। সেই থেকে বৃষ্টিপাতের নিরিখে উত্তর-পূর্বের এই জায়গাকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তবে চলতি মরশুমে বদলেছে পরিস্থিতি। আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২৫ সালের জুন থেকে আগস্ট অবধি অন্যান্য বারের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরামে। অন্যদিকে, রেকর্ড বৃষ্টিপাতের জেরে দেশের আর্দ্রতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কর্ণাটকের কোদাগু জেলার সুরলাব্বি।
‘চেরাপুঞ্জির থেকে একখানি মেঘ ধার দিতে পার গোবি সাহারার বুকে?’ কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা বিখ্যাত কবিতার লাইন। কবিতায় এই প্রশ্নের মাধ্যমে বৈষম্য বোঝাতে চেয়েছিলেন কবি। তুলনা টানতে যে জায়গার নামগুলো ব্যবহার করেছিলেন তাতেও ভুল নেই। একখানি নয়, গোবি-সাহারাকে কয়েকখানি মেঘ ধার দিতে পারে চেরাপুঞ্জি। হিসাব বলছে প্রতি বছর গড়ে ৮১৩২.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় এখানে। তবে এবছর ১ জুন থেকে ২০ আগস্ট অবধি চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৩৫০০ মিলিমিটার। মৌসিনরামেও প্রায় এক অবস্থা। একইসময়ে কর্ণাটকের সুরাবল্লিতে ৫৯৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সারাবছরের হিসাব ধরলে ৭৩০০ মিলিমিটার। পিছিয়ে নেই মহারাষ্ট্র। সেখানকার তামহিনিতে ৫৭৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। হাওয়া অফিসের দাবি, চলতি মরশুমে দেশের অন্তত ৩২টি জায়গায় চেরাপুঞ্জির থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পুরনো রেকর্ড বলছে, ১৯৬২ সালের বর্ষায় (জুন-সেপ্টেম্বর) সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয়েছিল চেরাপুঞ্জিতে। পরিমাণ ছিল ৫৪০১ মিলিমিটার। এবছর বর্ষার মরশুম শেষ হতে একমাস বাকি। এর মধ্যে অন্তত ১৯০০মিলিমিটার বৃষ্টি না হলে, ২০২৫ সালই হবে চেরাপুঞ্জির শুষ্কতম বছর।
শুধু চেরাপুঞ্জি নয়, মেঘালয়ের অন্যান্য রাজ্যেও বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। হিসাব বলছে অন্যান্য বছরের তুলনায় গড়ে ৪৩ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে চলতি মরশুমে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পশ্চিম জয়ন্তিয়ায়। তবে কী কারণে মেঘের এমন মন বদল, স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা। আগামীতে এমনটা চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে মারাত্মক হয়ে উঠবে তা বলাই যায়। শুধুমাত্র পরিবেশগত সমস্যা নয়, মেঘালয়ের বৃষ্টিতে পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। এইভাবে মেঘের দল চেরাপুঞ্জি থেকে সরতে থাকলে পর্যটকরাও আগ্রহ হারাতে পারেন। তাতে সামগ্রিকভাবে বিপদে পড়তে পারে মেঘালয়ের পর্যটন শিল্প।