• পুজোয় আনন্দের ‘কড়ি’ জোগাড়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন লক্ষ্মীরা
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • গোপাল সূত্রধর, বালুরঘাট: উমা ঘরে আসতে একমাসও বাকি নেই। নীল আকাশে সাদা মেঘ এবং মাঠে-ঘাটে কাশফুল জানান দিচ্ছে, পুজো আসছে। ঢাকিপাড়া থেকে কুমোরপাড়ায় জোর প্রস্তুতি। কিন্তু পুজোয় আনন্দ করতে তো চাই টাকা। সেই অর্থ জোগাতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন ঘরের লক্ষ্মীরা। কলেজ ছাত্রী থেকে গৃহবধূ, এমনকী প্রৌঢ়ারা মণ্ডপসজ্জা, দেবীর অলঙ্কার, হস্তশিল্প সহ নানা কাজ করে উপার্জন করেছেন। পুজোর আগে যতটুকু আয় হয়, সেটাই ওঁদের কাছে অনেক!

    পড়াশোনা, সংসারের কাজ সেরে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে তরুণী, বধূরা চলে আসছেন ডেকরেটরদের বাড়ি ও দোকানে। এই ছবি শুধু বালুরঘাটের নয়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কমবেশি সব জায়গার। মেয়েদের আশা, বাড়তি কাজ করে পুজোয় হাতখরচের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের বাড়তি জামাকাপড় কিনে দেওয়া যাবে। পূরণ হবে নিজের কিছু শখ।   

    পুজোর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে তাই বাড়ির কাছে এক ডেকরেটরের গোডাউনে কাজ করছেন বালুরঘাটের আশা সিং। বলছেন, স্বামীর উপার্জনে সংসার চলে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে। সামনে পুজো। কিছু তো বাড়তি টাকা চাই। স্বামীর একার রোজগারে কুলোয় না। তাই বাড়ির কাজকর্ম করে পুজোর আগে কয়েকটা দিন এখানে হস্তশিল্পের কাজ করতে আসি।

    কী কাজ করেন? আশা জানালেন, পুজোর ক’টা দিন মণ্ডপে দর্শনার্থীরা যে কারুকার্য, নকশা দেখেন, সেগুলি এখন থেকে ঘরে বসেই করা হয়। সে নকশাও বিভিন্ন ধরনের। কেউ ফলের বীজ দিয়ে সাজসজ্জার সরঞ্জাম বানাচ্ছেন, কেউ আবার শোলা দিয়ে তৈরি করছেন নানা কারুকার্য। অনেকে পুঁথির মালা, কাপড় সেলাই করে নানা নকশাও তৈরি করছেন।

    আশার পাশে বসে কাজ করছিলেন সুপর্ণা মালি। বছর একুশের সুপর্ণা কলেজ ছাত্রী। এই কাজ করে প্রতিদিন দু’শো থেকে আড়াইশো টাকা রোজগার করছেন। সুপর্ণার কথায়, বাড়ি থেকে পুজোর জামাকাপড় কিনে দেবেই। তারপরও পুজোয় মেয়েদের অনেক খরচ। সাজগোজ, রূপচর্চার জন্য টাকা চাই। পুজোর কটা দিন ভালো করে ঘোরা, আনন্দ করার জন্যও টাকা লাগবে। সব তো আর বাড়ি থেকে চাওয়া যায় না। তাই পড়াশোনার ফাঁকে এই হাতের কাজ করতে আসা।

    ডেকরেটররা বলছেন, পুজোর আগে এই কাজ করে এক একজন মহিলা ১০ থেকে ১২ হাজার আয় করেন। বালুরঘাটের ডেকরেটর্স কল্যাণ সমিতির সম্পাদক রাজনারায়ণ সাহা চৌধুরীর কথায়, প্রতিবছর আমার মণ্ডপসজ্জার কারুকার্য, নকশার কাজ করতে বহু মহিলা আসেন। এবছর প্রায় ১৫০ মহিলা আমার এখানে কাজ করছেন। পুজোর আগে জেলার সমস্ত ডেকরেটরের কাছেও মহিলারা কাজ করছেন। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)