• নদীর তীর অভিমুখে হাওয়া, ভয়ঙ্কর ক্লোরিন বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাণ্ডবেশ্বরের
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পাণ্ডবেশ্বর: সোমবার রাতে পাণ্ডবেশ্বরে পিএইচই-র জলপ্রকল্পে ক্লোরিন গ্যাস লিক করে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েন মোট ন’ জন। ঝাঁজালো ক্লোরিন গ্যাসে শুধু মানুষ নয়, সাপ, ব্যাঙ থেকে শুরু করে অনেক পশু মারা গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালেও সেই আতঙ্ক এলাকাজুড়ে। বিস্তীর্ণ এলাকার গাছের পাতা বির্বণ হয়ে গিয়েছে। বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হতে পারত। অজয় নদের তীরেই এই জলপ্রকল্প। প্রকল্পের উত্তর দিকে নদী ও দক্ষিণ দিকে জনবহুল পাণ্ডবেশ্বর। ঘটনার সময়ে বাতাসের অভিমুখ ছিল উত্তর দিকে। তাই ঘনবসতি এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়েনি। স্থানীয়দের দাবি, বাতাসের অভিমুখ ঘুরে গেলে মৃত ও অসুস্থের সংখ্যা বহুগুণ বাড়ত। পাণ্ডবেশ্বরের বিডিও বৃষ্টি হাজরা বলেন, বাতাসের অভিমুখ ঘুরে গেলে বিপর্যয় মোকাবিলা করা মুশিকল হতো। পুলিস, প্রশাসন ও দমকল তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে। 

    এই প্রকল্প থেকে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েত ও অণ্ডাল ব্লকের উখরা পঞ্চায়েতে এলাকায় জল সরবরাহ করা হয়। দুই পঞ্চায়েতই অত্যন্ত জনবহুল। প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই জলপ্রকল্পটি চালু। কিন্তু এর আগে কখনও এমন ঘটেনি। এদিকে রাত থেকে প্রকল্প বন্ধ থাকায় সায়মিক জল সঙ্কট দেখা দেয়। প্রকল্পের কর্মীদের একাংশের দাবি, গ্যাস লিক হয়েছিল ক্লোরিন বোঝাই সিলিন্ডার থেকে। নদী থেকে জল তুলে তা রাখা হয় জলপ্রকল্পের আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভারে। সেখানে পা‌ইপের মাধ্যমে ক্লোরিন পাঠিয়ে জল পরিস্রুত করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রকল্পে কোনও সমস্যা হয়নি। মজুত সিলিন্ডারগুলির একটি লিক হয়ে যায়। ঘরের উপরে রয়েছে বাতাসের অভিমুখ নির্ণয়ের যন্ত্র। কর্মীদের দাবি, আমাদের শেখানো হয়েছিল এমন দুর্ঘটনা ঘটলে বাতাসের অভিমুখ যেদিকে তার উল্টো দিকে ছুটতে হবে। সোমবার রাতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। ওই ঘরের অদূরেই ছেলের কোয়ার্টারে ছিলেন ৫৮ বছরের জ্যোৎস্না পট্টনায়ক। তিনি মারা যান। প্রসঙ্গত, তাঁর স্বামীও এই প্রকল্পেরই কাজ করতেন। তিনি আগেই মারা গিয়েছেন। 

    এদিন সকালেও সকলের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। একাধিক প্রাণীর মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। গাছগুলির রং পাল্টে গিয়েছে। জলপ্রকল্প লাগোয়া ইসিএলের কলোনি। বাতাসের গতিমুখ উল্টোদিকে থাকায় তাঁরা রক্ষা পান। রাতের পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, প্রায় চারঘণ্টা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে লিক হওয়া গ্যাস সিলিন্ডারটিকে নদীর চরে মাটিতে পুঁতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। 

    যদিও এত বড় ঘটনার পর দপ্তরের হেলদোল কম। কর্মীরা যেখানে থাকতে আতঙ্কিত, সেখানে জলপ্রকল্প এমনকী ক্লোরিনেশন চালু করার নির্দেশ আসে ফোনের মাধ্যমে। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে দপ্তরের কেউ মন্তব্য করছেন না। এসিপি পিন্টু সাহা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দেখব।  আপাতত দপ্তরের লোকজন নিজেরাই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)