পাঁচ বছর ধরে মিড-ডে মিলের লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ, কাটোয়ার কৈথন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তদন্ত
বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ মিড-ডে মিলের লাখ লাখ টাকা বছরের পর বছর ধরে আত্মসাতের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় কাটোয়া। পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার বেশি দেখিয়েই পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি ডব্লিউবিএমডিএমএস মেসেজিং অ্যাপে ভুল তথ্য দিয়ে এই টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। কাটোয়ার কৈথন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে৷ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে পরিচালন সমিতির সদস্যরা বিডিও এবং স্কুল পরিদর্শকের কাছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে দু’টি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। দাঁইহাট চক্রের অবর স্কুল পরিদরর্শক পিনাকী ঘোষ বলেন, ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে। তারপর জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
কাটোয়া-১ ব্লকের গীঁধগ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁইহাট চক্রের অধীনে এই কৈথন প্রাথমিক স্কুল। ওই স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬০১ জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা ১০। অভিযোগ, প্রতিদিন পড়ুয়াদের উপস্থিতির সংখ্যা বেশি দেখিয়েই সরকারি পোর্টালে মিড-ডে মিলের খরচ দেখানো হয়। পরে সরকারি সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়। এভাবেই পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমন করে আসছেন। কয়েকদিন আগেই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। প্রশাসনের অফিসাররা কয়েকদিন আগেই ওই স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের এমন কাণ্ডকারখানা দেখে তাজ্জব বনে যান। ওই স্কুলের শিক্ষক সুজয় পাল, শোভনদেব শর্মা মণ্ডলদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ২০১৮ সাল থেকেই এমনটা করে আসছেন। মিড-ডে মিলের হিসাবে সরকারি পোর্টালে ভুল তথ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা বারবার তাঁর কাছে হিসেব চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের বলেছিলেন, হিসেব দেখাতে তিনি বাধ্য নন। তাই আমরা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছি।
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি মিহির কুমার সাহা বলেন, আমরা কয়েকটা দিনের হিসেব বিডিওকে লিখিত দিয়েছি। গত ২ আগস্ট স্কুলে ২২১ জন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। ওই দিন মিড-ডে মিল খেয়েছে মাত্র ৮২ জন। কিন্তু সরকারি মিড-ডে মিলের খাতায় হিসাব দেখানো হয়েছে ৪১০ জন। গত ৪ আগস্ট ২৯৭ জন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। সেদিন মিড-ডে মিল খেয়েছে ১০০ জন পড়ুয়া। কিন্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে, ৪৫০ জন পড়ুয়া মিডডে মিল খেয়েছে। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার মণ্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিডিও অফিস থেকে আমাদের স্কুলে আধিকারিকরা এসেছিলেন। কিছু নথিতে ত্রুটি ছিল। বেনিয়ম কিছু হয়নি। স্কুলের পরিচালন সমিতির আরেক সদস্য পলাশ কুণ্ডুর কথায়, ওই শিক্ষক কোনওদিন শিশুদের ভালো খাবার দেন না। লক্ষ লক্ষ সরকারি টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন। ওই টাকা ফিরিয়ে এনে স্কুলের উন্নয়নে লাগানো হোক।
এদিকে অভিভাবকদেরও একাংশ বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে থানায় এফআইআর করা উচিত প্রশাসনের। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, শিশুদের জন্য বরাদ্দ অর্থ তছরুপের পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি।-নিজস্ব চিত্র