• মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা নিতুড়িয়ার সিভিক ভলান্টিয়ার লটারিতে পেলেন এক কোটি টাকা
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: কথায় বলে, ‘উপরওয়ালা জব দেতা হ্যায়, ছপ্পর ফাড়কে দেতা হ্যায়।’ ভগবান সহায় থাকলে ভাগ্য সবসময় সঙ্গ দেয়। নিতুড়িয়ার বাসিন্দা শ্রীমন্ত মণ্ডল যেন তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। ভগবানের আশীর্বাদে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেই সিভিক ভলান্টিয়ার ছ’টাকার লটারির জোরেই এখন রাতারাতি কোটিপতি। জেলাজুড়ে তাঁকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক লটারিতে এক কোটি টাকা পেয়ে এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। প্রাণহানি এবং লটারির টিকিট খোয়া যাওয়ার ভয়ে তিনি সোমবারের রাতটা থানাতেই কাটান।

    জানা গিয়েছে, সোমবার নিতুড়িয়া থানার সিভিক ভলান্টিয়ার শ্রীমন্তবাবু ১৫০ টাকা দিয়ে লটারির টিকিট কাটেন। রেজাল্ট বের হওয়ার পর টিকিট মেলাতে গিয়ে আকাশ থেকে পড়ার উপক্রম। কারণ তিনিই প্রথম পুরস্কারের এক কোটি টাকা পেয়েছেন! শ্রীমন্তবাবু একটুও সময় নষ্ট না করে সোজা থানায় গিয়ে হাজির হন। প্রথম পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি থানায় জানান। এদিকে, খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়।

    শ্রীমন্তবাবু বলেন, লটারি খেলার তেমন নেশা নেই। মাঝেমধ্যে ভাগ্য পরীক্ষার জন্য দু’-একদিন লটারির টিকিট কাটতাম। ওইদিন ১২০০ টাকার লটারি চারজন মিলে কিনেছিলাম। আমি ১৫০ টাকা দিয়ে ২৫টি লটারি কিনি। সেগুলির একটিতে প্রথম পুরস্কার বাবদ এক কোটি টাকা মিলেছে।

    শ্রীমন্তবাবু টালির চালের মাটির বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা এবং ভাইকে নিয়ে থাকেন। শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ারের মাইনের টাকায় এতগুলি মানুষের পেট চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তাই বছর দু’য়েক আগে শ্রীমন্তবাবু ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে একটি টোটো কেনেন। সেই টোটো ভাড়া খাটান। অবসর সময়ে নিজেই চালকের আসনে বসে পড়েন। একবার এই টোটো চালাতে গিয়েই তাঁর বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে। 

    দিনটা ছিল ২০২৪ সালের ১০মে। সেদিন রাতে নিতুড়িয়া থানা এলাকায় একটি বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য সড়বড়ির একটি পরিবার শ্রীমন্তবাবুর টোটো বুক করেছিল। কোনও চালক না পেয়ে নিজেই সেদিন টোটো চালিয়ে ওই পরিবারটিকে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। অনুষ্ঠানের শেষে রঘুনাথপুর-বরাকর রাজ্য সড়ক ধরে টোটোটি ফিরছিল। উল্টো দিক থেকে আসা একটি লরি ভামুরিয়া মোড়ের কাছে টোটোটিকে ধাক্কা মারে। একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যায় টোটোটি। গাড়িতে থাকা তিনজন যাত্রী মারা যান। তবে আশ্চর্যজনকভাবে চালকের আসনে বসে থাকা শ্রীমন্তবাবু প্রাণে বেঁচে যান। শ্রীমন্তবাবু বলেন, গত বছরের সেই দুর্ঘটনার কথা আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেইদিন ভগবান প্রাণে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। আর আজ ভগবান আমার স্বপ্নপূরণ করেছেন। একটি মাটির বাড়িতে বসবাস করি। স্বপ্ন ছিল একটা বাড়ি তৈরি করব। ২০১৩ সালে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে যোগ দিই। কিন্তু সামান্য টাকায় সংসার চালানোই দায় হয়ে যায়। তাই বাড়তি উপার্জনের জন্য টোটো চালাই। তাতে কোনও রকমে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু, এভাবে জীবন বদলে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি। এবার নিশ্চিন্তে কাজ করে যেতে পারব। • শ্রীমন্ত মণ্ডল। 
  • Link to this news (বর্তমান)