পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতে জমিকাণ্ড: সমিতির সদস্যপদ খোয়াতে পারেন অভিযুক্ত কং নেতা
বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের জমিকাণ্ডে সদস্যপদ খোয়াতে পারেন অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা বিজয়েন্দু বিশ্বাস। তিনি রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য এবং পদাধিকার বলে পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিল্পসঞ্চালকও। প্রায় পাঁচগুণ দামে বেআইনি ভাবেতিনি জমি বিক্রি করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। যেখানে রাজ্যের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ওই সদস্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী জোড়া ধারায় আইনি পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে।
শ্মশান তৈরির জন্য চলতি বছর গোড়ার দিকে একটি জমি কেনার উদ্যোগ নিয়েছিল পায়রাডাঙা পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী জেলাশাসক মারফত জমি কেনার পরিবর্তে পায়রাডাঙা পঞ্চায়েত সরাসরি পঞ্চায়েতেরই শিল্প সঞ্চালক বিজয়েন্দুর থেকেজমি কেনে। তাও আবার বাজার মূল্যের থেকে ৫ গুণ বেশি দামে জমি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ। জনগণের করের প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকায় সেই জমি কেনা নিয়ে জেলা প্রশাসন তদন্ত শুরু করে। এর মাঝে পায়রাডাঙার এক শিক্ষক হিমাদ্রিশেখর তালুকদার কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করেন। ২৭ আগস্ট সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন ১৯৭৩ মেনে ৯৭(সি) এবং ১০০(১)(সি) ধারায় আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হল, তা কলকাতা হাইকোর্টকে জানাতে হবে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। যা দেখে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, পায়রাডাঙার দাপুটে কংগ্রেস নেতা বিজয়েন্দু বিশ্বাস তাঁর সদস্যপদহারাতে পারেন। কারণ আইনে সেই ব্যাখ্যাই করা হয়েছে। যদিও মামলাকারী হিমাদ্রিশেখরবাবু বলেন, নিয়ম না মেনে পাঁচগুণ বেশি দামে জমি কেনা হয়েছে। কংগ্রেস নেতার সদস্যপদ খারিজ হওয়া উচিত। আমরা সেটাই চাইছি। শুধু তাই নয়, বেশি দামে যে জমি কেনা হয়েছে, তা জনগণের করের টাকা। আমরা চাই সেই অতিরিক্ত টাকাও বিজয়েন্দুবাবু পঞ্চায়েতের তহবিলে ফেরত দিন। নিয়ম মেনে শ্মশান তৈরির জন্য জমি কেনা হলে আমাদের আপত্তি থাকবে না।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে বিজয়েন্দুবাবুর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে এক ব্যক্তি ফোন ধরে তাঁর ছেলে পরিচয় দিয়ে জানান, এ বিষয়ে তিনি বাবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিক্রিয়া দেবেন। এর বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়। এই বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ফাল্গুনী বিশ্বাসেরও। জমি কেনার জন্য তৈরি কমিটিকে না জানিয়েই তিনি বিজয়েন্দুবাবুর থেকে পাঁচগুণ বেশি দামে জমি কিনেছিলেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করেন। তবে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশমতো প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নদীয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ। তিনি বলেন, আদালত আমাদের যা নির্দেশ দেবেন, আমরা সেই মতো পদক্ষেপ করব।