• নিয়মের ফাঁক গলে বেনোজল কৃষক বন্ধু প্রকল্পে, নজরদারি কৃষিদপ্তরের
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষক বন্ধু প্রকল্পকে সরকারি টাকা হাতানোর ঢাল বানিয়েছেন অনেকে। নিয়মের গেরোয় সেই অসাধু ব্যক্তির অ্যাকাউন্টেও ঢুকে যাচ্ছে কৃষক বন্ধুর টাকা। দেখা যাচ্ছে, একই জমিকে একাধিক শরিকের মধ্যে ভাগ করে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের জন্য আবেদন করা হচ্ছে। যার ফলে জেলাজুড়ে জমির পরিমাণে হেরফের না হলেও, উপভোক্তার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচিতেও এই প্রকল্পে এরকম আবেদন জমা পড়ছে। সেই সমস্ত আবেদন খতিয়ে দেখতে গিয়েই বিষয়টি নজরে আসছে কৃষিদপ্তরের। যদিও কৃষক বন্ধু প্রকল্পে এই সমস্যা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই চাষের কাজে যুক্ত নয়, এমন মানুষরাও কৃষক বন্ধুর সুবিধা নিচ্ছেন। সেই প্রক্রিয়াতেও অনিয়মের কোনও গন্ধ নেই। রাজ্য সরকারের নিয়ম মেনেই আবেদনকারীরা কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আসছেন এবং সময়মতো টাকাও পাচ্ছেন। 

    কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, আমাদের কাছে যেরকম আবেদন আসে সেই মোতাবেক আমরা সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখি। তারপর সেই আবেদনকারীর নাম কৃষক বন্ধু প্রকল্পের তালিকায় তোলা হয়। সময়মতো তাদের অ্যাকাউন্টে টাকাও পৌঁছে যায়। 

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম কৃষক বন্ধু প্রকল্পে প্রতি বছর রাজ্য জুড়ে লক্ষ লক্ষ চাষিকে আর্থিক সাহায্য করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সারা বছর চাষের কাজে আর্থিক ক্ষতি হলে কিছুটা রেহাই মেলে চাষিদের। সেই সঙ্গে চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সার ও নানা সরঞ্জাম কিনতেও সুবিধা হয় তাঁদের। কিন্তু এই প্রকল্পে প্রকৃত চাষিদের মধ্যে অনেক সময়ে বেনোজল ঢুকে যায়। তাঁরা চাষ না করেও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পান। এমনটাই মনে করছেন কৃষি‌দপ্তরের আধিকারিকরা। 

    অতীতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা গিয়েছে, একই জমিকে দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তি কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নাম তুলেছেন। কারণ তখন জমির নথি যাচাই সেভাবে হতো না। যার জন্য সেই প্রক্রিয়ায় বদল এনেছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে কোনও ব্যক্তি জমি কিনে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করলে, সেই জমির আগের মলিকের নথিপত্রও দেখাতে হয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির কোনও ব্যক্তির নামে ১০ বিঘা জমি রয়েছে। যে এতদিন কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ১০ হাজার টাকা পাচ্ছে। এবার তার মধ্যে ৩ বিঘা জমি সে নিজের পরিবারের কারও নামে করে দিলো। তখন সেই পরিবারের সদস্যও কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আওতায় এসে টাকা পাচ্ছেন।‌

    কারণ এই প্রকল্পে চাষের জমি থাকলেই সে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। কৃষিদপ্তর সূত্রে খবর, এই প্রকল্পে বছরে একজন চাষিকে সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। খরিফ ও রবি দু’টি মরশুমে দুই কিস্তিতে এই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর খরিফ মরশুমে নদীয়া জেলার ৬ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৯৪ জন চাষিকে কৃষক বন্ধুর টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মোট ১৬৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড বলেই মনে করছে প্রশাসনের আধিকারিকরা।
  • Link to this news (বর্তমান)