দরপত্র ছাড়াই দমকলের কর্মী, আধিকারিকদের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকার জুতো কেনার অভিযোগ উঠেছে। দমকল দফতর সূত্রের খবর, শুধুমাত্র একটি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে দমকলের কর্মী-আধিকারিকদের জন্য সাড়ে ছ’হাজার জুতো (কালো ও বাদামি রঙের) ও ছ’হাজার গামবুট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ‘বঙ্গশ্রী’ বা ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট হ্যান্ডিক্রাফট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’।
নিয়মমতো, সরকারি সামগ্রী কিনতে গেজেট নোটিফিকেশন করে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। যে সংস্থা কম দামে ভাল মানের সামগ্রী সরবরাহ করবে, সরকারি তরফে সেই সংস্থাকেই সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু ‘বঙ্গশ্রী’র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কোনও নিয়মই মানেনি। সূত্রের খবর, দমকলের এডিজি চলতি বছরের ৩ জুন ‘বঙ্গশ্রী’র চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসারকে (সিইও) চিঠি লিখে জানান, ‘দমকলের কর্মী, আধিকারিকদের জন্য জুতো কিনতে সরকারি অনুমোদন মিলেছে। আপনি নমুনা পাঠান।’ পরের দিনই বঙ্গশ্রীর সিইও দমকলের এডিজি-কে প্রত্যুত্তরে জানিয়ে দেন, ‘আপনার চিঠি মতো জুতোর নমুনা পাঠানো হল।’
দমকল সূত্রের খবর, অন্তত চারটি ঠিকাদার সংস্থা বঙ্গশ্রী-কে জুতো সরবরাহ করে। এ বার জুতো সরবরাহের জন্য বহু বার দফতরে অনুরোধ করেও সুযোগ পাননি শাহিদ আলম নামে এক ঠিকাদার। কেন তিনি এ বারও জুতো সরবরাহের সুযোগ পেলেন না, তা বিশদে জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে দমকলে চিঠি লেখেন ওই ঠিকাদার।
এই প্রসঙ্গে শাহিদের অভিযোগ, ‘‘টেন্ডারের নিয়ম যে মানা হয়নি, তার বড় প্রমাণ দমকলের চিঠি পাঠানোর পরের দিনই বঙ্গশ্রীর জুতোর নমুনা পাঠানো! সরকারি তরফে পুরো বিষয়টির তদন্ত হোক।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘গত দশ বছর ধরে জুতো কিনতে শুধু একটি সংস্থাকেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বহু বার পদস্থ কর্তাদের অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’
শাহিদের আরও অভিযোগ, ‘‘একটি সংস্থার থেকে জুতো কেনার সুযোগ দিয়ে দু’টি ভুয়ো সংস্থার নাম লেখা রয়েছে খাতায়-কলমে। টেন্ডারের কোনওপ্রক্রিয়াই মানা হয়নি। মোটা টাকার জুতো কেনার প্রক্রিয়ায় কেন শুধু একটি সংস্থাকে সুযোগ দেওয়া হল?’’ এ নিয়ে জানতে চেয়ে ‘বঙ্গশ্রী’র সিইও সঞ্জীব সেনকে প্রথমে ফোন করা হলে তিনি জানান, পরে ফোন করছেন। এর পরে একাধিক বার ফোন, টেক্সট মেসেজ বা ওয়টস্যাপ করা হলেও উত্তর মেলেনি।
আরও অভিযোগ, জুতোর নমুনা পরীক্ষাও নিয়ম মেনে হয়নি। সূত্রের খবর, দমকলের সদর দফতরে জুতোর নমুনা পরীক্ষা করার সময়ে লেদার টেকনিক্যাল কর্মী, রবার টেকনিক্যাল কর্মী এবং টিচিং টেকনিক্যাল কর্মীর থাকার কথা। অভিযোগ, সে সময়ে এঁদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। দমকলের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, বঙ্গশ্রী থেকে কেনা জুতোর মান ভাল নয়। অল্প দিনেই জুতোর সুখতলা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
বঙ্গশ্রী থেকে জুতো কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে দমকলের ডিজি রণবীর কুমার বলেন, ‘‘টেন্ডার প্রক্রিয়া তো বঙ্গশ্রী করবে। আমরা কিছু জানি না।তবে জুতোর নমুনা পরীক্ষা নিয়ম মেনেই হয়েছে।’’ ‘বঙ্গশ্রী’র জুতো কেনার প্রক্রিয়ায় দরপত্রের গরমিল নিয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টির তদন্ত করা হবে। কেউ দুর্নীতি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতির সঙ্গে কখনওই আপস করা হবে না।’’