বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন ভারতীয় সেনা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্যে আপত্তি তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ব্রাত্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন তিনি। একে একে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অন্য বিজেপি বিধায়কেরা। অধিবেশনে হইহট্টগোল শুরু হয়। বার বার সতর্ক করার পরেও পরিস্থিতি না বদলানোয় শুভেন্দুকে এই অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই অধিবেশনকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়কেরা।
সোমবার ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের প্রতিবাদ মঞ্চ খোলার কাজ শুরু করে ভারতীয় সেনা। সেই ভাঙা মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই মঞ্চ সরানোর প্রতিবাদ করেন তিনি। এর নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে বলে দাবি করেন মমতা। মঙ্গলবার অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় সেনার সেই মঞ্চ খোলার প্রসঙ্গ তোলেন ব্রাত্য। শুধু তা-ই নয়, ওই ঘটনার সঙ্গে ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাক সেনাবাহিনীর গুলি করার বিষয়টির তুলনা করেন তিনি। এতেই আপত্তি তোলেন শুভেন্দু-সহ অন্য বিজেপি বিধায়কেরা।
ব্রাত্য বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) যখন সেনাবাহিনী আমাদের আন্দোলন মঞ্চ ভেঙে দিল, তখন মনে পড়ছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা শহরে পাক সেনাবাহিনীর গুলি করে হত্যার ঘটনার কথা।’’ শিক্ষামন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ভারতীয় সেনা তৃণমূলের মঞ্চ ভেঙেছে।
ব্রাত্যের এই মন্তব্যের পরেই বিধানসভায় তুমুল হইহট্টগোল শুরু হয়। ভারতীয় সেনাকে অপমান করা হয়েছে, এমন দাবি তুলে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন শুভেন্দু। শুধু তা-ই নয়, ব্রাত্যের বিরুদ্ধে আরএসএসের প্রাক্তন প্রধান এমএল গোলওয়ালকারকে ভুল উদ্ধৃত করার অভিযোগও তোলেন শুভেন্দু। ব্রাত্য অধিবেশনে বলেন, অতীতে একটা বিষয় নিয়ে এক মত হয়েছিলেন গোলওয়ালকার এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। দু’জনেই চেয়েছিলেন ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য ভাগ হোক! সেই প্রথম দুই বিরোধী শিবির একটি মতে সম্মতি জানিয়েছিল। তবে নেহরু এবং গোলওয়ালকারের মতামতে সামান্য পার্থক্যও ছিল। নেহরুর মতে, পরিচয় হওয়া উচিত ভারতীয়। তবে গোলওয়ালকার হিন্দুত্বের কথা বলেছিলেন। ব্রাত্যের এই অভিযোগ নিয়ে সরব হন শুভেন্দু। তিনি জানান, গোলওয়ালকারকে ভুল উদ্ধৃত করছেন ব্রাত্য। শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ, ব্রাত্যকে তাঁর অভিযোগের প্রামাণ্য নথি বিধানসভার সচিবালয়ের জমা দিতে হবে। ব্রাত্য জানান তিনি তা করবেন।
শুভেন্দুদের দাবি, ব্রাত্যের বক্তৃতার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই দাবিকে সামনে রেখে স্লোগান দেন বিজেপি বিধায়কেরা। একই সঙ্গে ব্রাত্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাকে অপমান করার অভিযোগও আনেন। হট্টগোল থামানোর চেষ্টা করেন বিধানসভার স্পিকার। তবে পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষে শুভেন্দুকে এই অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করেন বিমান। অর্থাৎ, চলতি অধিবেশনে বাকি দিনগুলিতেও আলোচনায় যোগ দিতে পারবেন না বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে অধিবেশন ওয়াকআউট করে বিজেপি। দলীয় বিধায়কদের নিয়ে অধিবেশনকক্ষের বাইরে বেরিয়ে আসেন শুভেন্দু। বিধানসভার বাইরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে স্পিকার আমাকে সাসপেন্ড করেছেন। আমি সেনাবাহিনীর সম্মান রক্ষার জন্য সাসপেন্ড হয়েছি। তাই আমি গর্বিত।’’ উল্লেখ্য, ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে পাঁচ বার সাসপেন্ড হলেন শুভেন্দু।
পরে তাঁর বক্তব্যের প্রসঙ্গে অনড় ছিলেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে ঢাকায় যা ঘটেছে সেটা ইতিহাস। সেই কথা বলে আমি যদি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অপমান করে থাকি, তবে বেশ করেছি। আবার বলব একই কথা।’’