টানা ভারী বৃষ্টি রাজধানীতে, প্রবল দুর্যোগে বন্ধ একাধিক স্কুল, যমুনায় বন্যার আশঙ্কা
আজকাল | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে বুধবার আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (IMD)। লক্ষ্ণৌ আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে দেওয়া সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, নয়ডা ও গাজিয়াবাদ সহ একাধিক অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
ইতিমধ্যে জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গৌতম বুদ্ধ নগরে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, আর গাজিয়াবাদে বর্জ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায়, নয়ডা ও গাজিয়াবাদের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে যে ৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার সব স্কুল বন্ধ থাকবে।
খবর অনুযায়ী, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের অনুরোধ করা হয়েছে, স্কুল খোলার সময়সূচি ও অন্যান্য আপডেটের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ঘোষণা অনুসরণ করতে। এর আগে সোমবার ও মঙ্গলবার দিল্লি-এনসিআর এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতে জলমগ্নতা ও ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়। নয়ডার সেক্টর ৬২, ১৮ এবং গ্রেটার নয়ডার কিছু অংশে প্রচণ্ড জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর ফলে রাস্তায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। পাশাপাশি গুরুগ্রাম ও গাজিয়াবাদেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে অনাবশ্যক যাতায়াত থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময়।
এদিকে, বুধবার সকাল ৭টায় জানানো হয়েছে, যমুনা নদীর জলস্তর ২০৬.৮ মিটারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রেকর্ড করা ২০৮.৬৬ মিটারের মাত্র ১.৮ মিটার নিচে। উজানের ব্যারেজগুলো থেকে প্রচুর জল ছাড়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হথিনকুন্ড থেকে ১.৭৬ লাখ কিউসেক, ওয়াজিরাবাদ থেকে ৯৩,২৬০ কিউসেক এবং ওখলা থেকে ১.১৫ লাখ কিউসেক জল যমুনায় প্রবাহিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুরনো রেলওয়ে ব্রিজ (ORB) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং নিম্নাঞ্চলগুলোতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জনগণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় নিচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে যমুনা নদীর জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পুরনো রেলওয়ে ব্রিজ (Old Railway Bridge) যান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 'লোহা পুল' ব্রিজটিও ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা থেকে বন্ধ থাকবে।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়া দপ্তর মঙ্গলবার ‘রেড নাওকাস্ট’ সতর্কতা জারি করেছে। প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মিমি বা তারও বেশি বৃষ্টিপাত এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই সতর্কতা উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবের একাধিক জেলার জন্য জারি করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের পিলভীত, লখিমপুর এবং শাহজাহানপুর জেলা লাল সতর্কতার আওতায় এসেছে। হরিয়ানার ফতেহাবাদ, জিন্দ, হিসার, গুরুগ্রাম, রেওয়ারি এবং মেওয়াত জেলাগুলিতেও একই ধরনের সতর্কতা জারি হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে স্থানীয় বন্যা, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন এবং দুর্বল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাসিন্দাদের ঘরে থাকার, জলমগ্ন এলাকাগুলি এড়িয়ে চলার এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'ওড়িশার উপকূলজুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সোমবার রাত থেকে স্বাভাবিক জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। ভুবনেশ্বর ও কটকের মতো শহরগুলিতে জলমগ্নতার খবর পাওয়া গিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপর একটি নতুন নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হওয়ায় আগামী চার দিন রাজ্যে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস।
মঙ্গলবার ও বুধবার পর্যন্ত সমুদ্র অতি রুক্ষ থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সেই কারণে ওড়িশা উপকূলের জেলেদের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, 'বঙ্গোপসাগর এবং মায়ানমার উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত উচ্চপর্যায়ের ঘূর্ণায়মান বায়ুচাপ বলয়ের প্রভাবে ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ বলয় তৈরি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে।'
অন্ধ্রপ্রদেশেও ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় বর্জ্রবিদ্যুৎসহ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস। উত্তর উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ (NCAP) ও ইয়ানামে সোমবার ভারী বৃষ্টি ও বর্জ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ (SCAP) এবং রায়ালসীমা এলাকাতেও বর্জ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ো বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে (১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর) NCAP, ইয়ানাম, SCAP ও রায়ালসীমার কিছু অংশে ঘণ্টায় ৪০–৫০ কিমি বেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর। সার্বিকভাবে, ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার ও প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।