• মাছের মড়ক! ‘মৃত্যু-যন্ত্রণা’ থেকে সাহেব বাঁধকে বাঁচাতে পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন সুভাষ দত্ত
    প্রতিদিন | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার, পুরুলিয়া: সাহেব বাঁধের দূষণ ঠেকাতে ৬ টি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিলেন পুরপ্রধান। কিন্তু তিন মাস হতে চলল সেই পদক্ষেপের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ফলে আবার মাছের মড়ক! আর সেই অবস্থার সাক্ষী থাকলেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। শুধু তাই নয়, মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া এই সাহেব বাঁধকে বাঁচাতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছন তিনি। তবে ওই আদালতে আরেকটা মামলা হয়েই পড়ে থাকবে? নাকি নিষ্পত্তি হয়ে কোচবিহারের সাগরদিঘি রবীন্দ্র সরোবর ও সাঁতরাগাছির মত প্রাণ বাঁচবে পুরুলিয়ার এই প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবর সাহেব বাঁধ? সুভাষ দত্তের পরিদর্শনকালে এই প্রশ্নই তুলছেন পুরুলিয়া পুরশহরের মানুষজন।

    কিছুদিন আগে থেকে সুভাষ দত্তের কাছে খবর ছিল এই জলাশয় কচুরিপানায় ভর্তি হয়ে রয়েছে। সমাজ মাধ্যম সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি এই রিপোর্ট পেয়েছিলেন। তারপর খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, সাহেব বাঁধ থেকে পানামুক্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দূষণ থেকে এই জলাশয়কে রেহাই দেওয়া যায়নি। তবে আজ নয়, বাম আমল থেকেই সাহেব বাঁধের জল দূষিত। একাধিকবার এই জলাশয়ের জল জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগে পরীক্ষার পর দূষিত-র রিপোর্ট মিলেছে। সুভাষ দত্তের কাছে এও খবর এসেছিল যে, এই জলাশয়ের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। যা মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। গত জুন মাসের প্রথমদিকে পুরুলিয়া পুরসভার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি এই বিষয়টি তাদেরকে দেখভালের কথা বললেও, তিন মাস পরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে জলাশয়ের বিভিন্ন দিকে ভাসছে মরা মাছ। রীতিমতো মড়ক। চলতি বছরের গ্রীষ্মে যেমনটা ছিল।

    যদিও এবার মাছের মড়ক আগেরবারের চেয়ে ঢের বেশি। তবে মড়ক নতুন নয়, ২০২০ ও ২০২২ সালেও পুরুলিয়ার গর্বের এই জলাশয় এমন মড়ক দেখেছিলেন শহরের মানুষজন। রীতিমতো মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করা পুরুলিয়া শহরের এই ফুসফুস কি আদৌ বাঁচবে?

    কি বলছেন পরিবেশবিদ? সুভাষ দত্তের কথায়, “এই জলাশয় সংস্কারে যে বিপুল অর্থ প্রয়োজন তা পুরসভার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। কোন পুরসভা এই কাজ করতে পারবে না। তাই এই জলাশয়কে সংস্কারের বিষয়ে নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। নগরোন্নয়ন মন্ত্রণকে যুক্ত করতে হবে। সেই কারণেই আমি জাতীয় পরিবেশ আদালতে যাচ্ছি। “

    সাহেব বাঁধ পরিদর্শন করে পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালির সঙ্গে দেখা করতে যান সুভাষ দত্ত। যদিও অসুস্থ থাকায় পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। তবে অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকের সঙ্গে অবশ্য সুভাষ দত্ত দেখা করেন।

    অন্যদিকে পুরুলিয়ার উপ-পুরপ্রধান ময়ূরী নন্দী বলেন, “সাহেব বাঁধ পুরুলিয়ার গর্ব। চলতি পুর বোর্ড ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে এর সংস্কার করেছে।” ফলে পরিবেশবিদদের এতে প্রশংসা করা উচিৎ বলেও মত উপ-পুরপ্রধানের। তাঁর কথায়, ”প্রশংসা না করে কেন সুভাষ দত্ত উষ্মা প্রকাশ করলেন তা আমাদের লজ্জার বিষয়। যারা টাকা খরচ করেছেন, দেখভাল করেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন কি হয়েছে?” এভাবেই নিজের দায় ঝেড়ে ফেলেন উপ-পুরপ্রধান হয়েও।

    বলে রাখা প্রয়োজন, এই জলাশয়কে দূষণ থেকে বাঁচাতে পুরুলিয়া পুরসভা যে ছটি পদক্ষেপ নিয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল নৌকা বিহার, ফোয়ারা, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট-র সংস্কার, ম্যানহোলে জমে থাকা বর্জ্য সরানো, পর্যাপ্ত চুন প্রয়োগ, জলাশয় তলে থাকা কচুরিপানার দল পরিষ্কার। পুরুলিয়া পুরসভা মনে পরে নৌকাবিহারকে ঘিরে বিতর্ক থাকলেও ওই ব্যবস্থায় জল ‘এদিক-সেদিক’ হবে তাতে নাকি দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব! জলাশয়ে মাছ চাষের জন্য লিজ পাওয়া মৎস্য চাষিরা চুন প্রয়োগ করে থাকেন। ফলে ছটি পদক্ষেপের মধ্যে একটি পদক্ষেপের কাজ হলেও বাকিগুলোর কোন কাজই হয়নি বলে অভিযোগ। এই জলাশয়ে মাছ চাষের অধিকারপ্রাপ্ত সমিতির সদস্য বিশ্বেশ্বর ধীবর জানান, “সাহেব বাঁধের পাড় সন্নিহিত হাসপাতাল, নার্সিংহোমের নোংরা জল সরাসরি জলাশয়ে পড়ছে। তাতেই বিষাক্ত হয়ে পড়েছে এই বাঁধ। সেই কারণেই এমন মাছের মড়ক। “

    উল্লেখ্য, ৮৫ একর জুড়ে এই জলাশয় রয়েছে। সাবেক মানভূমের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার কর্নেল টিকলে জেলের বন্দীদের দিয়ে জলাশয়টি খনন করিয়েছিলেন। ২০০১ সালে তৎকালীন জেলাশাসক দেবপ্রসাদ জানা-র উদ্যোগে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের নামে এই জলাশয়ের নামকরণ হয় ‘নিবারণ সায়ের’। তারপর এই জলাশয়কে সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে জাতীয় সরবরাহের জন্য। কিন্তু সাহেব বাঁধ আছে সেই সাহেব বাঁধেই!
  • Link to this news (প্রতিদিন)