• নামের ভুলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে! চাইতেই ‘কাটমানি’ দাবি
    প্রতিদিন | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: নামের ভুলে মাসের পর মাস লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকছে অন্য এক মহিলার অ্যাকাউন্টে। তাও আবার কিনা স্বামীর সঙ্গে থাকা জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে। আর তা ফেরত চাইতেই দাবি করা হচ্ছে ‘কাটমানি’। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাটিয়ারী বানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাটিয়ারী গ্রামে। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা। মাসের পর মাস কেন ওই মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাচ্ছেন না তা নিয়ে সরকারকে একহাত নিয়েছেন কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, চার বছর ধরে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঠিক করা যাচ্ছে না। ‘দুয়ারে সরকার’, ‘দিদিকে বলো’র মতো প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতার দাবি, দ্রুত ওই মহিলা যাতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পান সেই চেষ্টা করা হবে।

    ২০২১ সালে বাংলার মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় অন্যান্য মহিলাদের মতোই মাটিয়ারী গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জনা চক্রবর্তীও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন জানান। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অঞ্জনাদেবী দেখেন তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না প্রকল্পের টাকা। এই বিষয়ে কৃষ্ণগঞ্জ বিডিওর দ্বারস্থ হন তিনি। সেখানে অঞ্জনা চক্রবর্তী জানতে পারেন, তাঁর নামে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা চালু হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, অ্যাকাউন্টেই নাকি ঢুকছে টাকা। কিন্তু কোথায় সেই টাকা?

    এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েকটা মাস। ফের একবার বিডিও’র দ্বারস্থ হন অঞ্জনাদেবী। কিন্তু তাঁকে ফের জানানো হয় যে, সমস্ত টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু কেন তিনি তা পাচ্ছেন না? সেই কারণ জানতেই বানপুরের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হন। সেখানে জানতে পারেন, কোনও টাকাই ঢোকেনি অ্যাকাউন্টে। কিন্তু কেন ঢুকছে না লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, তা জানতে কখনও বিডিও অফিস ছুটে যান আবার কখনও ব্যাঙ্কে। আর এই করেই কেটে যায় দু’বছর। শেষমেশ অঞ্জনা চক্রবর্তী জানতে পারেন তাঁর টাকা গেদের শ্যামলী মহলদার নামে একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে ঢুকছে।

    আর এরপরই এই বিষয়ে কৃষ্ণগঞ্জ বিডিওর দ্বারস্থ হন অঞ্জনা চক্রবর্তী। বিষয়টি জানতে টাকা ফেরাতে উদোগী হয় জেলা প্রশাসন। ব্যাঙ্ক এবং বিডিও’র সহযোগিতায় দু’বছরের ২১ হাজার ৫০০ টাকা শ্যামলী মহলদার তুলে দেন অঞ্জনাদেবীর কাছে। জানা যায়, এরপরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংশোধনের জন্য ‘দুয়ারে সরকারের’ দ্বারস্থ হন অঞ্জনাদেবী। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণগঞ্জের বিডিও অফিসে আবেদনপত্র জমা দেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। এমনকী ‘দিদিক বলো’তেও এই বিষয়ে অভিযোগ জানান। অঞ্জনাদেবীর অভিযোগ, একাধিক জায়গায় জানিয়েও লাভের লাভ হয়নি। বরং লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকে চলেছে শ্যামলী মহলদারের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে, যা তাঁর স্বামীর সঙ্গে আছে।

    সম্প্রতি অঞ্জনাদেবী খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, প্রয়োজন টাকার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের তাঁর প্রাপ্য টাকার জন্য আরও একবার শ্যামলী মহলদারের দ্বারস্থ হন অঞ্জনা চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, আগেরবারে টাকা দিলেও এবার বেঁকে বসেছেন। শুধু তাই নয়, এজন্য অর্ধেক টাকাও দাবি করছেন। অঞ্জনাদেবী জানান, ”যেহেতু তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে, সেই কারণে টাকা তুলে দিতে গেলে অর্ধেক টাকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন শ্যামলী মহলদার।” আর তা না দিলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে না বলেও গেদের ওই বাসিন্দা জানিয়েছেন বলে দাবি অঞ্জনাদেবীর। ফলে এখন চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন তিনি। কীভাবে মিলবে সেই টাকা? বুঝতেই পারছেন না অঞ্জনা চক্রবর্তী।

    এই ব্যাপারে তৃণমূল পরিচালিত মাটিয়ারী বানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ”এই সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। আমরা চেষ্টা করব, যাতে অঞ্জনাদেবীর নিজের অ্যাকাউন্টে লক্ষী ভান্ডারের টাকাটা ঢোকে।” অন্যদিকে কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপির মন্ডল সভাপতি শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ”তৃণমূলের এটাই কালচার। দুয়ারে সরকার, দিদিকে বল, পাড়ায় পাড়ায় সব ভাওতা।” চার বছর ধরে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঠিক কেন করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই বিজেপি নেতা। অন্যদিকে কৃষ্ণগঞ্জের বিডিও সৌগত সাহা বলেন, ”ব্যাপারটা শুনেছেন এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।”

    অন্যদিকে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্ধেক টাকা চাওয়ার ব্যাপারে শ্যামলী মহলদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে যে অঞ্জনা চক্রবর্তীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকেছে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)