নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: দিল্লিমুখী দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যমুনা সেতুতে ওঠার আগেই বাঁদিকে যে রাস্তা চলে যাচ্ছে, তা দিয়ে এইমসে পৌঁছনো যায়। ওই রাস্তারই ধার ঘেঁষে পরপর তৈরি হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। কোনওটি দিল্লি সরকারের তৈরি করে দেওয়া। কোনওটি আবার নিজ উদ্যোগে। যেহেতু অন্যতম ব্যস্ত একটি হাইওয়ে, তাই তাঁবুগুলোর সামনে কাঠের ব্যারিকেড দেওয়া। সবক’টি তাঁবু অবশ্য এখনও ভর্তি হয়নি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লোকজন রয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই শরণার্থী। দিল্লির বন্যা দুর্গতরা আপাতত এখানেই আশ্রয় নিয়েছে।
লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে দিল্লি-এনসিআর সহ গোটা উত্তর ভারতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই বন্যা কবলিত। দিল্লিতে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনার জলস্তর। মঙ্গলবার রাতেই তা বিপদসীমা ছুঁয়েছে। বুধবার থেকে যমুনার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এর ফলে দিল্লির যমুনা তীরবর্তী এলাকাগুলি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে মালপত্র সরিয়ে নিয়েছেন সুরক্ষিত জায়গায়। নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার বাসিন্দাদের উঁচু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে পাঠিয়েছে প্রশাসন। তবে ২০২৩ সালের মতো দিল্লির মূল শহরে অন্তত বুধবার রাত পর্যন্ত যমুনার জল প্রবেশ করেনি। যদিও দিল্লিবাসীর আশঙ্কা, বৃষ্টি যদি না কমে, তাহলে দু’বছর আগের মতো শহরের একটি অংশ প্লাবিত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। দিল্লির বিজেপি সরকার অবশ্য এখনও বরাভয় দিচ্ছে বাসিন্দাদের। তাদের আশ্বাসবাণী, শহরে জল ঢুকবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? অন্তত দিল্লির তামাম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তেমন বোধ হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই পুরনো যমুনা সেতুতে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জারি হয়েছে ট্র্যাফিক অ্যাডভাইজরিও।
দিল্লির নিগমবোধ ঘাট এলাকা, বাসুদেব ঘাট এলাকা, সিভিল লাইনস লাগোয়া তুলনামূলক নিচু এলাকায় যমুনার জল ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় দিল্লিতে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল। অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি নৌকোয় (রাবার বোট) চলছে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের কাজ। এরপরেও কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করে যাচ্ছে দিল্লির বিজেপি সরকার? প্রশ্ন তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সবমিলিয়ে দিল্লিতে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক তরজাও। ভারী বৃষ্টিতে জলে ভাসছে সাইবার সিটি গুরুগ্রাম। গাজিয়াবাদ, নয়ডার অবস্থাও তথৈবচ। জানা যাচ্ছে, হরিয়ানার হাথনিকুণ্ড জলাধার থেকে প্রায় তিন লক্ষাধিক কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে যমুনায়। এর ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত হয়েছে।