• পুশব্যাক নয়, মিলবে না নাগরিকত্বও, ২০২৪’এ এলেও বাংলাদেশি হিন্দুদের ছাড়, হঠাৎ অভিবাসন বিধি বদল কেন্দ্রের
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: স্বস্তি এল বাংলাদেশ থেকে বিগত ১১ বছরে আসা হিন্দুদের। কিন্তু নিশ্চয়তা এল না। মোদি সরকার তাদের ভারতে বসবাসের অধিকার দিলেও নাগরিকত্বের পথ প্রশস্ত করল না। অতএব মিলল না ভোটাধিকারও। ১ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া নতুন নির্দেশিকায় বলা হল, ধর্মীয় অত্যাচারের জেরে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে বাংলাদেশি হিন্দুরা ভারতে ঢুকেছে, তাদের চিহ্নিত করা হলেও ফেরত পাঠানো হবে না। তারা ভারতে বসবাস করার অধিকার পাবে। 

    ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশন) অর্ডার, ২০২৫ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, যা ফরেনার্স আইনের অন্তর্ভুক্ত। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নথিপত্র ও ভিসা ছাড়াই ভারতে এসে বসবাস করছে, তাদের পুশব্যাক করা হবে না। তাহলে তাদের স্টেটাস কী? সেকথা স্পষ্ট করা হয়নি। কিন্তু যাদের সঙ্গে তাদের একাসনে বসানো হচ্ছে, তারা হল তিব্বতি এবং শ্রীলঙ্কা থেকে আসা তামিল। কারণ তাদেরও সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়নি। সেটা বলা সম্ভবও নয়। সেক্ষেত্রে সিএএ’র ফের সংশোধনী বিল আনতে হবে সংসদে। আপাতত সেরকম কোনও পদক্ষেপ সরকার না নিলেও, মনে করা হচ্ছে পরবর্তী ধাপ হতে চলেছে সেটাই। ২০১৯ সালের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট আইনে মোদি সরকার নাগরিকত্বের নয়া নিয়ম চালু করেছিল। সেই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা যদি আবেদন করে, তাদের নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হবে। কিন্তু হঠাৎ বদলে যাওয়া বিধি অনুযায়ী, অঘোষিতভাবে গত ১১ বছরে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের ভারতে থাকার অধিকার দিলেও তাদের মর্যাদা হবে উদ্বাস্তু অথবা আশ্রিত। ভারত রাষ্ট্রসংঘের উদ্বাস্তুনীতিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। সুতরাং উদ্বাস্তুদের তাবৎ সরকারি পরিষেবা দিতে  ভারত সরকার বাধ্য নয়। সরকারই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কাদের কোন মর্যাদা দেওয়া যাবে। প্রশ্ন হল, হঠাৎ এই বদল কেন? নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের প্রভাব বাংলায় এখন থেকেই তীব্রভাবে আছড়ে পড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে, বহু মুসলিম ও হিন্দু বাঙালির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। আধার ও ভোটার কার্ডকে মান্যতা না দেওয়ায় নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করা দুষ্কর হবে বহু মানুষের। আর সেই তালিকায় সবথেকে বেশি পড়বে গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম তো বটেই, হিন্দুরাও। সেই আতঙ্কেই বিজেপি বিরোধী মনোভাব প্রবল হচ্ছে। আর সেই আঁচ পেয়েই ২০২৪ পর্যন্ত ভারতে আসা বাংলাদেশি হিন্দুদের স্বস্তির বার্তা দিতে চা‌ই঩ছে কেন্দ্র। বিরোধীদের দাবি, এভাবে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ককে ‘সুরক্ষা কবচ’ দিচ্ছে বিজেপি। কিন্তু তারা কি সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব পাবে? সে বিষয়ে নতুন নির্দেশিকা নীরব। তার থেকেও বড় প্রশ্ন—এসআইআর হলে এই অংশের স্টেটাস কী হবে? সিএএ সংশোধন করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আসা বাংলাদেশি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তই কি পরবর্তী ধাপ? এবং তারপর এনআরসি? 
  • Link to this news (বর্তমান)