• নিউটাউন দুর্গাবাড়ি মন্দির সমিতির পুজোয় মা’কে সাজিয়ে তোলা হয় ভক্তদের দেওয়া শাড়ি-গয়নায়
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: ১৯৩৮ সাল। ইংরেজ আমল। সেবার দুর্গাপুজোয় সরকারি কর্মচারীরা ছুটি পেলেও ব্যতিক্রম ছিলেন আলিপুরদুয়ারের তৎকালীন মহকুমা শাসক এন গুপ্তা। পুজোয় যেতে পারবেন না, মেনে নিতে পারেননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেন তিনিও দুর্গাপুজোয় শামিল হবেন। কিন্তু কীভাবে। ঠিক করেন নিজেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করবেন। তবে, পুজো করার অনুমতি ছিল না তাঁর কাছে। তাই মহকুমা শাসক ছুটেছিলেন বক্সা ফোর্টে ইংরেজদের সদর দপ্তরে। ইংরেজ সাহেব এন কালহানকে দুর্গাপুজোর গুরুত্ব বোঝানোর পর পুজো করার অনুমতি দিয়েছিলেন। 

    আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাসকের অফিস চত্বরে এভাবেই ১৯৩৮ সালে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। সাহেবরা সপরিবারে বক্সা ফোর্ট থেকে হাতি ও ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমতলে নেমে মহকুমা শাসকের দুর্গাপুজোয় যোগ দিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন অঞ্জলি। খেয়েছিলেন ভোগও। মহকুমা শাসকের অফিস চত্বরে ১২ বছর চলার পর বিরাজমোহন ধর, মনোরঞ্জন বসু্, ক্ষিতিশ বিশ্বাস, মহেন্দ্রলাল বিশ্বাস, বনমালী গৌতম সহ স্থানীয়দের হাত ধরে পুজোটি শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে আজকের নিউটাউন দুর্গাবাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকেই নিউটাউন দুর্গাবাড়ি মন্দির সমিতি পুজোটি পরিচালনা করে আসছে। ১৯৭৪ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও তাঁর স্ত্রী মায়া রায় সমিতির পুজোয় অঞ্জলি দিয়ে মায়ের ভোগের প্রসাদ খেয়েছিলেন।  

    সমিতির পুজো কমিটির সঞ্জিত ধর ও সভাপতি বুবুন দে বলেন, পুরনো রীতি, শাস্ত্রীয় অনুশাসন ও অনাবিল নিষ্ঠায় আমাদের এখানে মায়ের পুজো করা হয়। সাবেকী নিয়ম মেনে এবছরও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর সন্ধ্যায় খিচুড়ি খাওয়ানো হবে। অষ্টমীতে এলাকার সব বাড়িতে ভোগের প্রসাদ পাঠানো হবে। দশমীতে মহিলাদের সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে প্রতিমার বিসর্জন দেওয়া হয়। 

    পুজোয় মাকে সাজানো হয় ভক্তদের দেওয়া গয়না ও শাড়িতে। ভক্তদের দেওয়া শাড়ি আলমারিতে ও গয়না লকারে রেখে দেওয়া হয়। পুজো এলে ফের তা বের করা হয়। ফলে পুজোয় মাকে সাজাতে গয়না বা শাড়ি কিনতে হয় না। এদিকে, এবারও মায়ের ডাকের সাজের প্রতিমা তৈরি করছেন নোনাইপাড়ের মৃৎশিল্পী গোপাল পাল। আর বংশ পরম্পরায় এবছরও পুজো করবেন পুরোহিত শিবশঙ্কর হাজরা। মণ্ডপসজ্জা করছেন বাবাই পাল ও মণ্ডপে আলোকসজ্জার কাজ করছেন খোকন মুখোপাধ্যায়।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)