• শিলিগুড়ি: মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানে প্রাণ চঞ্চল ১০৮ বছরের পুজো, মন্দির তৈরি করতে চান উদ্যোক্তারা
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: রেলের সহায়তা অমিল। তীব্র অর্থ সঙ্কট। তবুও বন্ধ হয়নি শতবর্ষ প্রাচীন শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের দুর্গাপুজো। আট বছর আগে শতবর্ষ উদ্‌যাপনের পর পুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, তা কার্যকর হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের অনুদানে এখনও ‘জীবন্ত’ সেই পুজো। এবার পুজোর ১০৮তম বর্ষ। এখন মন্দির তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে উদ্যোক্তারা। তাঁরা এব্যাপারে রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দরবার করবে। পাহাড়ের পাদদেশে শিলিগুড়ি শহর। একদা টয় ট্রেন, রেল কোয়ার্টার, মহানন্দা নদী, চা বাগান আর জঙ্গল দিয়ে ঘেরা ছিল এই শহর। স্বাধীনতার আগে এখানে রেলে কাজ করতেন কিছু বাঙালি। তাঁদের উদ্যোগেই এখানে সূচনা হয় দুর্গাপুজোর। ২০১৭ সালে পুজোর ১০০ বছর পূর্তি হয়। সেবারই পুজো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা।

    পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ চিন্ময় ঘোষ বলেন, একদা রেলমন্ত্রক এই পুজোয় আর্থিক সহায়তা করত। দীর্ঘদিন ধরে সেই সহায়তা আর মিলছে না। স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহও সেভাবে হয় না। আর্থিক সঙ্কটের কারণেই ২০১৭ সালের পর পুজো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ২০১৮ সালে ২৫ হাজার টাকা পুজো অনুদান ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেবার থেকে সরকারি অনুদানেই ঐতিহ্যবাহী এই পুজো চলছে। এবার পুজোর জন্য মিলবে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এজন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।

    প্রাচীন আমলের জেল্লা বা আড়ম্বর আর নেই। কিন্তু এখনও নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে এখানে পুজো করা হয়। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ বলেন, ১৯১৭ সালে সূচনা হয় পুজোর। এটাই শহরের প্রথম দুর্গাপুজো। সেই সময় পুজো উপলক্ষ্যে এখানে মেলা, নাচ, গানের আসর বসত। তিনদিন ধরে চলত নাটক। সেই আড়ম্বর এখন আর নেই। তবে, প্রাচীন রীতি অনুসারে পুজো করা হয়। বৈষ্ণব মতে হয় পুজো। এতে রেল কলোনির ছেলেমেয়ে, বধূরা অংশ নেন।

    পুজোর ভোগেও রয়েছে বৈচিত্র্য। পুজো কমিটির সম্পাদক প্রবীর পাল বলেন, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিনই ভোগ বিলি করা হয়। ভোগে খিচুড়ি, পোলাও, সবজি, সাত থেকে ন’রকম ভাজা, মিষ্টি, চাটনি, নারু, মোয়া ও মিষ্টান্ন দশভুজার কাছে নিবেদন করা হয়। বর্তমানে এই পুজো কমিটিতে রয়েছে ১৪ জন। যারমধ্যে চারজনই মহিলা। আমরাই এই পুজো সামাল দিই।

    শতবর্ষ প্রাচীন এই পুজো বাঁচিয়ে রাখতে মন্দির তৈরি করতে চান উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ বলেন, যেখানে পুজো হয়, সেটি রেলের পরিত্যক্ত স্থান। সেই জায়গায় মন্দির তৈরি করার জন্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা জমানো হয়েছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষ ও পুরসভার কাছে আবেদন করব। পাশাপাশি পুজোর দায়িত্ব ছাড়া হবে নতুন প্রজন্মের হাতে।
  • Link to this news (বর্তমান)