মন্ত্রী ‘ঘনিষ্ঠ’ সিভিকের দাদাগিরি সালিশিতে দু’লক্ষ টাকা দাবি
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, হরিশ্চন্দ্রপুর: স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মেটাতে ডাকা সালিশি সভায় দাদাগিরির অভিযোগ উঠল মন্ত্রী ‘ঘনিষ্ঠ’ সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবিমতো দু’লক্ষ টাকা না দেওয়ায় যুবক গোলাম রসুলকে অপহরণ করে আটকে রাখেন ওই সিভিক। এখানেই শেষ নয়, পুলিস গোলামকে উদ্ধার করার পর অভিযোগপত্র থেকে নাম সরানোর জন্য পরিবারকে ওই সিভিক টানা হুমকি দিচ্ছিলেন বলে দাবি। এরপর রাতের অন্ধকারে যুবকের দাদার দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে সিভিক তারিক আনোয়ারের বিরুদ্ধে। সালিশির কথা স্বীকার করলেও টাকা চাওয়া ও দোকানে আগুন লাগানোর কথা মানতে চাননি হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যর স্বামী তারিক।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সিভিকের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরের নারায়ণপুর গ্রামে। ৯ মাস আগে নারায়ণপুরের বাসিন্দা গোলাম রসুলের সঙ্গে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার শেখপুরা গ্রামের রিজওয়ানা পারভীনের বিয়ে হয়। শুরু থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হতো। সেই অশান্তি মেটানোর জন্য ২৩ আগস্ট হরিশ্চন্দ্রপুরে সামুখা গ্রামে সালিশি সভা ডাকে মেয়ের পরিবার ও সিভিক। সেখানে সমঝোতা না হলে গোলামকে থানায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে সিভিকের মদতে অপহরণ করে বিহারে পরিত্যক্ত ঘরে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। একদিন পর হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিস বিহার থেকে গোলামকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তারপর অভিযোগপত্র থেকে সিভিকের নাম সরানোর জন্য বারবার চাপ ও হুমকি আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত দু’টো নাগাদ যুবকের দাদা মাসুদ আলমের দোকানে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের অভিযোগ, কয়েকদিন আগে সিভিক ফোন করে হুমকি দিয়েছিল, বড় ক্ষতি হবে। তারপর এই ঘটনা। মাসুদ জানান, স্ত্রী ঝগড়া করে বিহারে বাবার বাড়ি চলে গেলে তাকে আনতে গিয়েছিল ভাই। সেখানে ভাইকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পরে সামুখা গ্রামে মেয়ের দাদুর বাড়িতে সালিশি সভা বসায় তার পরিবার ও সিভিক। ভাইকে গাড়িতে বসিয়ে রাখার পর দু’লক্ষ টাকা দিলে চার ঘণ্টার মধ্যে সালিশি সভায় সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সিভিক। সেখানে মধ্যস্থতা না হলে থানায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে গোলামকে অপহরণ করে বিহারে নিয়ে চলে যায়। মাদুদ বলেন, এই ঘটনার পিছনে সিভিকের হাত রয়েছে। সিভিক সহ চারজনের বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। তবে, অভিযোগপত্র থেকে তার নাম সরানোর জন্য হুমকি দেয় সিভিক। আক্রোশে সোমবার রাতে সামুখা গ্রামে দোকানে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী তাজমুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সিভিকের দাবি, মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সালিশি সভায় আমাকে ডাকা হলেও অপহরণের সঙ্গে যুক্ত নই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। মন্ত্রী তাজমুল বলেন, প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে। এর বেশি কিছু বলব না। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি মনোজিৎ সরকার বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে।