কয়েক মাসেই তাল কাটল স্বাস্থ্য পরিষেবায়, বালুরঘাট হাসপাতালে কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন চার চিকিৎসক
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, বালুরঘাট: জুন মাসে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ১৮ জন চিকিৎসক। তিন মাস না যেতেই তাঁদের মধ্যে চারজন বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল ছেড়ে দেওয়ার মনস্থির করলেন। ওই চিকিৎসকরা দু’বছরের বন্ডে এসেছিলেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ না হতেই চলে যাচ্ছেন তাঁরা। হাসপাতাল সুপারকে লিখিতভাবে সেকথা জানিয়ে দিয়েছেন চার চিকিত্সক।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত তিনমাসে ১৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে আগেই একজন ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আরেকজন রয়েছেন ছুটিতে। সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসকদের মতো আরও অনেকে লাইনে রয়েছেন। এখন তাঁদের আটকাতে মরিয়া কর্তৃপক্ষ। কারণ, এমনিতেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তারপর এভাবে চিকিৎসকরা চলে যাওয়ায় পরিষেবা ব্যাহত হলে সমস্যায় পড়বেন রোগীরা।
সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, জুন মাসে ওই চিকিৎসকরা এসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। সে. চিঠি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। এভাবে চিকিৎসক চলে যাওয়াটা হাসপাতালের পক্ষে ভালো নয়। তবুও বাকি চিকিত্সকদের নিয়ে ভালোভাবে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই চারজনের মধ্যে মেডিসিন, শিশু বিশেষজ্ঞ, নাক, কান, গলা এবং ফিজিওথেরাপির চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁরা চলে গেলে ওই বিভাগগুলিতে ঘাটতি দেখা দেবে। কারণ কোনও বিভাগেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। ফলে এই চার বিভাগে দু’একজন করে চিকিৎসককে বিপুল মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে। অন্যদিকে, এই হাসপাতালে যতজন চিকিৎসক থাকার কথা, তার অর্ধেক নিয়ে পরিষেবা চলছে। ফলে মেডিসিন, চর্ম, চক্ষু, অস্থি, গাইনো, অ্যানাস্থেশিয়া সহ নানা বিভাগে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে শতাধিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৬০ জন। ফলে বিভিন্ন বিভাগে পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা লেগে থাকে বলে অভিযোগ রোগীদের। স্বল্প সংখ্যক চিকিত্সককে বহির্বিভাগ, এমার্জেন্সি আবার ওয়ার্ডেও রাউন্ড দিতে হয়। ফলে ঠিক সময়ে সব জায়গায় থাকতে পারেন না চিকিত্সকরা। পরিষেবা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ ওঠায় মাস চারেক আগে বালুরঘাট হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসক দেওয়ার অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ভবন। মূলত, এমবিবিএস পাশ করার পর ওই চিকিৎসকদের দু’বছরের জন্য হাসপাতালগুলিতে নিযুক্ত করা হয়। জুন মাসের ৩ তারিখ হাসপাতালে আসেন ১৮ জন চিকিৎসক। তাঁরাই এবার একের পর এক চলে যাওয়া শুরু করেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মেডিক্যাল কলেজ নেই। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালই ভরসা। কিন্তু এই হাসপাতালে চিকিৎসকরা বেশিদিন থাকতে চান না বলে অভিযোগ। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই হাসপাতালে প্রতি বছর বন্ডে সই করা চিকিৎসক ও জুনিয়র চিকিৎসক দেওয়া হয়। কিন্তু প্রান্তিক এই জেলায় নানা সুযোগ সুবিধার অভাবে তাঁদের অধিকাংশই মাঝপথে চলে যান।