পুজোর আগে রিহার্সালে ব্যস্ত হরিরামপুরের হাতিডোবায় চণ্ডীমঙ্গল পালাগানের শিল্পীরা
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সোমেন পাল, গঙ্গারামপুর: মায়ের আগমনীতে মুখে হাসি ফোটে হরিরামপুরের চণ্ডীমঙ্গল পালাগানের শিল্পীদের। কিছুদিন বাদেই দুর্গাপুজো। তার আগে হরিরামপুরের হাতিডোবা এলাকায় চলছে জোর রিহার্সাল। সকাল কিংবা সন্ধ্যা অবসর পেলেই চণ্ডীমঙ্গল পালাগানের শিল্পীরা নিজেদের বাজিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিবারের মতো এবারও তাঁরা মুখিয়ে আছেন দুর্গাপুজোয় এই পালাগান মঞ্চস্থের জন্য। একসময় রাজবংশী সমাজে পুজোর কয়েকটা দিন এই পালাগানের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এখনও উত্তরবঙ্গের বেশকিছু এলাকায় এই পালাগান হয়। পুজোর আগে তাই গোপাল সরকার, জ্যোতিষ রাজবংশীদের জোর ব্যস্ততা।
বাড়িতে তাঁরা প্রাচীন লিপি থেকে তোলা এই পালাগানের রিহার্সাল চালাচ্ছেন অবসর সময়ে। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই পালাগান। পালায় বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে চণ্ডীদেবী। দেবীর বিভিন্ন রূপকে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি ধনপতি, বণিক, কালকেতু, ফুল্লরা সহ একাধিক চরিত্র এই পালাগানে থাকে।
হরিরামপুরের হাতিডোবার পেশায় সবজি ব্যবসায়ী গোপাল সরকার দুপুরে অবসরে ডাইরি দেখে এই পালাগানের সংলাপ ঝালিয়ে নিচ্ছেন। বরাত পাওয়ার অপেক্ষায় গোপাল। তাঁর কথায়, পুজোর পাঁচটা দিন এই পালাগান করেই কাটে আমাদের। পুজোতে এটাই আমাদের বাড়তি উপার্জন। গোপালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১০ বছর বয়স থেকেই তিনি চণ্ডীমঙ্গল পালাগান করেন। ৯ জনকে নিয়ে তাঁদের দল। প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই পড়াশোনায় ইতি পড়ে গোপালের। তিনি বলেন, প্রাচীন চণ্ডীমঙ্গল কাব্যগ্রন্থ থেকে এই পালা তোলা হয়েছে এক লেখকের সাহায্যে। আমি বলেছি, লেখক আমাকে লিখে দিয়েছে।
নিজের জেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও ডাক আসে। পালাগানের পাশাপাশি এই শিল্পী সবজির ব্যবসা করেন। পুজোর সময় বাড়তি উপার্জন হলেই পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। পুজো শেষে বাড়ি ফেরেন।
মহেন্দ্র এলাকার শিল্পী জ্যোতিষ রাজবংশী বলেন, দুর্গাপুজো থেকে আমাদের পালাগানের শুরু হয়। চলে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। শহরে চণ্ডীমঙ্গল পালাগানের সেরকম চল নেই। গ্রামের পুজোতে বিশেষ করে রাজবংশী অধ্যুষিত অঞ্চলে আমাদের ডাক পড়ে।