মঙ্গলবার রাতে ঝোপঝাড়ে ঘেরা কোয়ার্টারের বাইরে জল আনতে গিয়ে ছিলেন খালেক। সুযোগ বুঝে তাঁকে একটি সাপ দংশন করে। সেটি বিষধর কিনা তিনি তা জানতে পারেননি। চিকিৎসাশাস্ত্র বলে, যে সাপই দংশন করুক রোগীকে রোগীকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখতেই হবে। সেক্ষেত্রে খালেকেরও নিজেকে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু, হাসপাতালে আগত রোগীদের কথা ভেবে তিনি স্থির থাকতে পারেননি। সারা রাত জেগে থেকেও বুধবার হাসপাতালে টানা রোগী দেখে গিয়েছেন। ঘটনায় এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা হতবাক।
সূত্রের খবর, হাসপাতালের পানীয় জলের রিজার্ভারের পাম্প খারাপ হয়ে পড়েছিল। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলি নির্জলা হয়ে পড়ে। এদিন পাম্প সারানোর ফলে কোয়ার্টারগুলিতে পানীয় জল পরিষেবা সচল হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসক খালেক স্থানীয় একটি সোলার পাম্পে জল আনতে গিয়েছিলেন। সেই জল নিয়ে ফেরার সময় কোয়ার্টারের কাছে কোনও একটি সাপে বাঁ পায়ের পাতায় ছোবল মারে। ঘটনার পর ক্ষতস্থানে প্রচণ্ড জ্বালা হতে থাকে। সাপে কামড়ানোর মতো দু’টি দাঁতেরও চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। খালেক সোজা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসেন। সেখানে পরীক্ষা করার পর দেখা যায় রক্তচাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে। মাথা ঘোরাচ্ছে। টিটেনাস সহ কিছু ওষুধ, ইঞ্জেকশন নিয়ে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে থাকেন। সারারাত তাঁকে জেগে থাকতে হয়। এদিন সকাল হওয়ার পরেই রীতিমতো আউটডোরে ভিড় বাড়ে। তাই তিনি সময় নষ্ট না করে চিকিৎসার কাজ করতে শুরু করেন। প্রায় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা করেন। এক চিকিৎসক বলেন, সাধারণত সাপে কাটা রোগীকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। রোগী যাতে না ঘুমিয়ে পড়ে, সেদিক লক্ষ্য রাখতে হয়। মাঝে মাঝে প্রেসার চেক করা হয়। কিন্তু ওই চিকিৎসক পর্যবেক্ষণে না থেকে নিজের কাজে অবিচল ছিলেন।
খালেক বলেন, ‘ওইদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ অজ্ঞাত একটি সাপ আমার বাঁ পায়ের পাতায় ছোবল মারে। তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা করাই। সাময়িক ভয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। এদিন সকালে দেখি প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তাই আর চুপচাপ বসে থাকতে পারিনি। আউটডোরে বসে চিকিৎসার কাজ করি।’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসক আব্দুল খালেক সাহেব ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মুরাডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি হাসপাতালে পরিষেবা দিয়ে যান। এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁর ভালোই সম্পর্ক। সকলেই তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। আন্তরিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে সীমানা প্রাচীর না থাকার জন্য কুকুর, গরু, ছাগল অবাধে ঘুরে বেড়ায়। কোয়ার্টারের চারপাশ ঝোপ জঙ্গলে ভরে উঠেছে। বৈদ্যুতিক আলো কম থাকায় সন্ধ্যা হলেই হাসপাতালের চারপাশে অন্ধকার নেমে আসে। পঞ্চায়েত থেকে ব্লকে জানলেও কাজ করেনি। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘আলোর বিষয়টি আমাদের পাড়ার সমাধানে ধরা হয়েছে। জঙ্গল পরিষ্কারের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’ নিজস্ব চিত্র