নরকযন্ত্রণার অপর নাম পাণ্ডবেশ্বরের রাস্তা, উদাসীন ইসিএল, ব্লক প্রশাসন রাস্তার তালিকা পাঠিয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পাণ্ডবেশ্বর: পাণ্ডবেশ্বরের রাস্তা এখন নরকযন্ত্রণার অপর নাম। খনি অঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তা প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই সেই রাস্তায় দাপাচ্ছে ইসিএলের ওভারলোডেড লরি। যার জেরে রাস্তাতেই পুকুরের আকারে গর্ত তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পাণ্ডবেশ্বর বাজারে রেলের অসহযোগিতায় রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। যার জেরে নিত্যদিন দুর্ভোগের শিকার সাধারণ মানুষ। খুদে স্কুল পড়ুয়ারাও সমস্যায় পড়ছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। রাস্তা খারাপের বিষয়ে অবগত ব্লক প্রশাসনও। তারা ইতিমধ্যেই খারাপ রাস্তার তালিকা তৈরি করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন দেখার কখন রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হয়। ইসিএলেরই বা কতদিনে হুঁশ ফেরে।
পাণ্ডবেশ্বরের বিডিও বৃষ্টি হাজরা বলেন, আমার ব্লকে ১৫টি রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন। তার তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য প্রশাসনকে পাঠিয়ে দিয়েছি। ফান্ড এলেই রাস্তা সংস্কার শুরু হবে।
কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সবেলিটি (সিএসআর) ফান্ড এলাকা উন্নয়নে খরচ করতে হয় বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে। ইসিএলেও কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের অধিনে লাভজনক একটি সংস্থা। যাঁরা এলাকা থেকে কয়লা তুলে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে। খনি অঞ্চলের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, বিদ্যুৎ দেওয়ার দায়িত্ব এতদিন পালন করে এসেছে ইসিএল। গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়েছিল সেই সূত্র ধরেই। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার আসার পর থেকেই এই সব বিষয়ে অতি ‘হিসেবি’ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়ছে খনি অঞ্চলের রাস্তা। জনজীবনের মান নিম্নমুখী। অন্য রাস্তা দূরে থাক, ইসিএল যে রাস্তা দিয়ে কয়লা পরিবহণ করছে সেই রাস্তাও সংস্কার করছে না বলে অভিযোগ। যার ফল ভোগ করছে পাণ্ডবেশ্বরবাসী। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। ঝাঁজরা ও সোনপুরবাজারি ইসিএলের দুই সর্ববৃহৎ খনি প্রকল্পই পাণ্ডবেশ্বরকে ঘিরে রয়েছে। ঝাঁজরা থেকে জোয়ালভাঙা, মহাল হয়ে কয়লা বোঝাই ডাম্পার আসছে সাউথ শ্যামলা সাইডিংয়ে। সেই রাস্তাই ব্যবহার করে হাজার হাজার বাসিন্দা। তা এখন মরণকূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তার মাঝে মাঝে পুকুর সমান গর্ত। তার পাশ দিয়েই ছুটে যাচ্ছে ইসিএলের কয়লা পরিবহণ করা দৈত্যাকার ডাম্পার। প্রাণ হাতে নিয়ে অটো, টোটো, বাইকে যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ।
মহালে গিয়ে দেখা গিয়েছে এক ভয়ঙ্কর চিত্র। সেখানে রাস্তার উপর থাকা বিশাল গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে খুদে পড়ুয়ারা। একটি স্কুলের সবে ছুটি হয়েছে। প্রাণ হাতে নিয়ে সেই শিশুরা ওই ভয়ানক রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। পাণ্ডবেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাটির অবস্থা অবর্ণনীয়। দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা নিয়ে মানুষ সমস্যায়। রাস্তার একটি বড় অংশ রেলের জমিতে। ব্লক প্রশাসন ও তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তারা রাস্তা সংস্কার ও রাস্তার দু’ পাশে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু রেল ‘নো অবজেকশন’ না দেওয়ায় তা করা যাচ্ছে না। এই টানাপোড়েনের জেরে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি রবীন পাল বলেন, ইসিএল ও রেলের অসহযোগিতায় রাস্তার এই অবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাণ্ডবেশ্বরের বিজেপি নেতা জিতেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, মহালের ওই রাস্তা ইসিএলের মেনে নিচ্ছি। বাকি রাস্তাগুলি কেন সংস্থার করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ইসিএলের ডিরেক্টর টেকনিক্যাল নীলাদ্রি রায়কে ফোন করা হলেও তাঁর ফোন সুইচড অফ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।-নিজস্ব চিত্র