নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ ধাম নাম শুনলেই শৈবভক্তদের হৃদয় নাড়া দিয়ে ওঠে। প্রাচীন সেই শহরকে ঘিরে বাঙালির আবেগও কম নয়। শ্রীরামকৃষ্ণ সেখানেই হরগৌরির দর্শন পেয়েছিলেন। রানি রাসমণির ঘাটও রয়েছে। বিশ্বনাথ ধাম ছাড়া কাশীর মূল আকর্ষণ গঙ্গার ঘাটগুলি। দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গা আরতির মাহাত্ম্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এছাড়াও অসি ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাটও বেশ প্রথিতযশা। এবার গঙ্গাতীরের সেই ঘাটগুলি ফুটে উঠবে আসানসোলের পুজো মণ্ডপে। গঙ্গা ঘাটের সিঁড়ি থেকে ঘাটের স্থাপত্য নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলে এক টুকরো বারাণসী গড়তে চলছে পাঁচগাছিয়ার গান্ধীনগর দুর্গাপুজো কমিটি। ইউনাইটেড ক্লাবের আয়োজনে এবার পুজো ৪১তম বর্ষে পা দিল। অভিনব থিম ভাবনায় দর্শণার্থীদের ভিড় টানতে অন্য পুজো কমিটি গুলিকে টেক্কা দেয় শহর লাগোয়া পাঁচগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই পুজো।
শুধু মণ্ডপ নয়, এবার চমক থাকছে মায়ের প্রতিমাতেও। প্রতি বছরই সাবেকি দুর্গাপ্রতিমা করে মানুষের নজর কাড়তেন পুজো উদ্যোক্তারা। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী সনাতন রুদ্রপালের হাতে মা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠতেন। এবার সেই প্রতিমা বিশাল আকারে তৈরি করা হচ্ছে। ২৫ ফুটের দুর্গা প্রতিমায় সেজে উঠবে মণ্ডপের ‘গর্ভগৃহ’।
পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। এখানেই তাঁর আদি বাড়ি। আসানসোলের মেয়রের পুজো হলেও পুজোর রাশ ধরেছেন এলাকার মেয়েরাই। চাঁদা আদায় থেকে প্রতিমা আনার যাবতীয় দায়িত্ব তাঁদের হাতেই ন্যস্ত। মেয়েদের পুজো এবার মেয়েদের দুর্গারূপে তুলে ধরতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপের গর্ভগৃহের বাইরে থাকবে আরও একটি দুর্গা প্রতিমা। তা সিলিকনের তৈরি। দশভূজা মূর্তি হলেও সেখানে মা’কে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে স্থানীয় মেয়ের আদলে। পুজো উদ্যোক্তা রাহুল উপাধ্যায় বলেন, ‘নারী শক্তিকে সম্মান জানাতেই এই উদ্যোগ।’
বারাণসীর গঙ্গাবক্ষে নৌকায় বসে যেভাবে ঘাটগুলিকে দেখতে লাগে, পাঁচগাছিয়ার মণ্ডপটির তিনদিকে সেই ছবিই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। নদীর পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বালির চর তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন মণ্ডপ শিল্পী সুতানু মাইতি। কয়েক বছর ধরেই পুজো কমিটি নতুন নতুন থিম ভাবনা ভেবে সবাইকে চমকে দিয়েছে। তাই পুজোর কয়েক দিন এই এলাকায় তিল ধারনের জায়গা থাকে না। যাবতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চতুর্থীর দিনই শেষ করে দেওয়া হবে। দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি করা হবে বলে জানিয়েছেন পুজো কমিটির সম্পাদক মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন জোর কদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি। বারাণসীর প্রাচীন ঘাটগুলিকে ফুটিয়ে তোলাই উদ্যোক্তাদের মূল চ্যালেঞ্জ। বারণসী দর্শনে মুখিয়ে আসানসোলবাসী। -নিজস্ব চিত্র