মাঠের সমস্যা ও আর্থিক অনটনে জাতীয় খেলা ছাড়ছেন কাঁকসার কবাডি খেলোয়াড়রা
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মানকর: পরিবারের আর্থিক অনটন প্রবল। খেলার সামগ্রী থেকে মাঠের অভাব সহ একাধিক সমস্যা রয়েছে। তবু কিছু করে দেখানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সেই বাধা কাটিয়ে কাঁকসা ব্লকের মেয়েরা দাঁতে দাঁত চেপে কবাডি অনুশীলন করছেন। এই মুহূর্তে ব্লকে চারটি মেয়েদের কাবাডি দল রয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা কবাডি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ২০টি ছেলেদের ও আটটি মেয়েদের কাবাডি দল জেলায় আছে। তবে সব থেকে বেশি কবাডি দল রয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা এলাকায়। ছেলে ও মেয়ে উভয় দল থেকেই বেশকিছু খেলোয়াড় জাতীয়স্তরে, খেলো ইন্ডিয়া স্কুলস্তরে কবাডি খেলেছেন। যেমন পানাগড়ের মনীষা যাদব। তিনি খেলো ইন্ডিয়ায় অংশগ্রহণ করে সফল হয়েছেন। এই ব্লকেরই বাসিন্দা কবিতা হেমব্রম, পোরানি সোরেনের মতো খেলোয়াড়রা অনূর্ধ্ব-১৪ রাজ্য স্কুল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। কিন্তু, আক্ষেপ, এলাকায় কবাডি খেলার সঠিক মাঠ মিলছে না। এমনকী, জাতীয়স্তরে প্রতিনিধিত্ব করে খেলোয়াড়দের কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধাও মেলে না। ফলে একসময় রুটিরুজি জোটাতে খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন খেলোয়াড়রা।
কাঁকসা ব্লকে তিনটি মেয়েদের দলের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সৈয়দ রহমত আলি। তিনি জানান, মূলত ম্যাটের উপর এই খেলা হয়। কিন্তু, অধিকাংশ জায়গায় ম্যাটের ব্যবস্থা থাকে না। আবার ফাঁকা মাঠে খেলোয়াড়রা খেললে চোট পাওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে খেলোয়াড়রা ঝুঁকি নিতে চায় না। কবাডি খেলার উন্নতি করতে গেলে ম্যাটের দরকার।
কবাডিপ্রেমীরা জানান, ভারতের জাতীয় খেলা হয়েও অনেকাংশেই অবহেলিত থেকে গিয়েছে এই খেলা। দেখা যায়, রাজ্য বা জাতীয়স্তরে খেলা কবাডি খেলোয়াড়দের সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধা মেলে না।
দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের ভালো জুতো থেকে পোশাক সবেতেই সমস্যা রয়েছে। ভালো মানের জুতো কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা ব্লকে আদিবাসী পরিবার থেকে মহিলা দলে খেলোয়াড় উঠে আসছে। রহমত সাহেব জানান, মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের সঠিক জায়গা দরকার হয়। তাছাড়া কাঁকসা এলাকায় আগে একটি মাঠে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। কিন্তু, মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে ওই মাঠে প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে কাঁকসা ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ভবনের সামনে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভবনের ভিতর মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কবাডি খেলোয়াড় মুঙ্গলি ওরাং বলেন, কবাডি খেলতে গেলে আমাদের বাথরুমের সমস্যা থাকে। তাছাড়া পোশাক পরিবর্তনের সঠিক জায়গাও পাই না। কাঁকসার পিয়ারিগঞ্জের বাসিন্দা ভবতোষ ঠাকুরা বলেন, আমাদের ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মেয়েরা কবাডি খেলায় উঠে আসছে। যা খুবই ভালো দিকের ইঙ্গিত করছে। এই মেয়েদের দেখে এলাকার অন্যান্য ছেলেমেয়েরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারাও আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু, কবাডি খেলাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে সরকারি বা বেসরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলে খেলোয়াড়রা মাঠে সেরাটা দিতে পারবে।-নিজস্ব চিত্র