নেতৃত্বের রোষে কৃষ্ণনগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলাররা, টিকিট দেওয়ার আগে ভূমিকা যাচাই
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন এলে কৃষ্ণনগর শহরে দাঁত ফোটাতে পারে না তৃণমূল কংগ্রেস। কার্যত প্রতি ওয়ার্ডেই ডাহা ‘ফেল’ করেন শহরের ঘাসফুল শিবিরের তাবড় তাবড় নেতা। অন্যদিকে তাঁরাই আবার নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে নাগরিক পরিষেবা অচল করতে সিদ্ধহস্ত। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করেই কৃষ্ণনগর পুরসভায় তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের চেয়ারপার্সন রীতা দাসের বিরুদ্ধে কাউন্সিলারদের একাংশ অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। সেটা যে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভালোভাবে নেয়নি, মঙ্গলবার কলকাতার বৈঠকে তা ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের রীতিমতো রোষের মুখে পড়তে হয়। পুরসভায় প্রশাসক বসিয়ে সকলের কাউন্সিলার পদ কেড়ে নেওয়ার মতো হুঁশিয়ারির সম্মুখীনও হতে হয়েছে শহরের পুর প্রতিনিধিদের। কীভাবে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার কৈফিয়ত চাওয়া হয়। পুরসভার বাজেট পাশ কেন হল না, সেই নিয়েও শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে পড়েন কাউন্সিলাররা। আগামী পুরভোটে টিকিট দেওয়ার আগে তাঁদের ভূমিকা আতসকাচের নীচে রাখা হবে। যদিও এই মুহূর্তে কৃষ্ণনগর পুরসভার ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত মঙ্গলবার শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কৃষ্ণনগর পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলারদের কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়। সেই বৈঠকে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সি সহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শহরের তৃণমূল কাউন্সিলারদের পাশাপাশি কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মহুয়া মৈত্র, মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন। জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে উভয়পক্ষই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তাদের কথা জানায়। সেখানেই অনাস্থা নিয়ে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে শীর্ষ নেতৃত্ব। মিটিংয়ে চেয়ারপার্সনের বিরোধী গোষ্ঠীর এক কাউন্সিলার বলেন যে, পুরসভার ব্যাপারে সমস্ত কিছু দলকে আগাম জানানো হয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব তা অস্বীকার করে। তখন ওই কাউন্সিলার জানান, ডিএলবিকে তাঁরা নাকি সমস্ত কিছু জানিয়েছিলেন। যদিও এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই ডিএলবিকে জানানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও কলকাতার এই মিটিং প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ শহরের পুর প্রতিনিধিরা। অপসারিত চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, এটা দলের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমি কোনও মন্তব্য করব না।
উল্লেখ্য, বিগত আট মাস ধরে কৃষ্ণনগর পুরসভায় নাগরিক পরিষেবা লাটে উঠেছে, যা নিয়ে শহরবাসীর মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। নতুন অর্থবর্ষে বাজেট এখনও পুরসভায় পাশ হয়নি। কাউন্সিলারদের মধ্যে হাতাহাতি, পুরকর্মীকে মারধর, দলের চেয়ারপার্সনের ঘরের সামনে ধর্না প্রদর্শনের মতো একাধিক ঘটনা কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আগ বাড়িয়ে চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে কাউন্সিলারদের একাংশ তাঁকে অপসারণ করেছে। ঠিক পরদিনই পুর নগরোন্নয়ন দপ্তর নাগরিক পরিষেবা অচল রাখার জবাব চেয়ে কৃষ্ণনগর পুরসভাকে শোকজ করে। ভাইস চেয়ারম্যান নরেশচন্দ্র দাস, প্রথমে সিআইসি ও পরে কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেন। তা নিয়েও কাউন্সিলারদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিল। এখন দেখার, শীর্ষ নেতৃত্বের ধমক খাওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন হয় কি না!