• সীমান্ত পেরলেই ‘রেডিমেড বাবা’! তৈরি জাল নথিপত্র
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে শুধু বসবাস করা নয়, বাংলাদেশিদের মিলছে একেবারে ‘রেডিমেড বাবা’। আর সেই বাবাদের পরিচয় দিয়েই তৈরি হচ্ছে জাল নথিপত্র। তারপর ভারতীয় হয়ে অনুপ্রবেশকারীরা অবাধে সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করছে। মোটা টাকার ‘প্যাকেজে’ এক একজন বাংলাদেশিকে জলপথ পেরিয়ে সূতির সীমান্তবর্তী গ্রামে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে। সেই প্যাকেজের মধ্যে মিলছে রেডিমেড বাবা ও জাল নথি তৈরির কাজ।

    গত সপ্তাহে পুলিস সূতির ইসলামপুরে দু’টি বাড়িতে হানা দেয়। সেখান থেকে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে বহাল তবিয়তে তারা ওই সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করছিল। পুলিস জানায়, ধৃতদের নাম মহম্মদ মামুনার রাশেদ এবং মোজাম্মেল হক। পুলিসি জেরায় অভিযুক্তরা জানিয়েছে, দালালদের সাহায্যে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে তারা নথি বানিয়েছিল। সূতির ইসলামপুরে এক দালালের নবনির্মিত বাড়িতে তারা থাকত। ধৃতরা জেরায় আরও জানিয়েছে, মামুনার ইসলামপুর গ্রামের সাবের আলিকে বাবা হিসেবে দেখিয়ে সমস্ত নথিপত্র বানিয়ে নিয়েছিল। অপরদিকে মোজাম্মেল সূতির ইমামবাজার দহরপাড়ের বাসিন্দা জালাল মহলদারকে বাবা হিসেবে দেখিয়ে জাল নথিপত্র তৈরি করেছিল। এদিকে, মামুনারের আসল বাবা মহম্মদ লুৎফরের বাড়ি বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার হাসানপুর ক্যাম্প পাড়ায়। মামুনার ভারতে ঢুকে নিজের নাম বদল করে রেখেছিল ফিতু শেখ ওরফে আলম। মোজাম্মেলের আসল বাবার নাম আয়নাল হক। বছর কয়েক আগে তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার জগন্নাথপুরে। নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে দালালদের সাহায্যে ধৃতরা রেডিমেড বাবা পেয়ে গিয়েছিল। সেই পরিচয় দিয়ে বানানো হয়েছিল জাল আধার ও প্যান কার্ড সহ অন্যান্য নথি।

    পুলিস তাদের জেরা করে আরও কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলেই জানিয়েছেন জঙ্গিপুর পুলিস জেলার এক আধিকারিক। পুলিসের অনুমান, সূতির ইসলামপুর, লক্ষ্মীপুর, নুরপুরের মতো গ্রামগুলিতে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে।

    জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, এই দুই ধৃতকে জেরা করে আমরা বেশকিছু নাম পেয়েছি। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন দালাল রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন লোককে বাবা সাজিয়ে তারা নাকি এই সমস্ত বাংলাদেশিকে সাহায্য করেছে। ঘটনার পর থেকে তারাও পলাতক। আমরা খোঁজ করছি। সীমান্তবর্তী গ্রামে আর কোনও বাংলাদেশি এভাবে আত্মপরিচয় গোপন করে গাঢাকা দিয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    সীমান্ত লাগোয়া সূতির নূরপুর পঞ্চায়েতের সদস্য শাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, সীমান্তের গ্রামগুলির পাশেই নদী রয়েছে। বর্ষার সময় ওপারের লোকজন সাঁতরে এসে অনেকেই গোপনে থাকছে। অনেকেই আত্মীয়বাড়ি এসেছে বলে থাকতে দিচ্ছে। তারপর ধীরে ধীরে এলাকার লোকজনের পরিচয় দিয়ে সমস্ত ডকুমেন্টস বানিয়ে ফেলছে। ফলে পরবর্তীতে তাদের চিহ্নিত করতে গিয়ে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সূতির বাসিন্দা রুবিয়া সুলতানা বলেন, এই অভিযোগ বেশ গুরুতর। অনুপ্রবেশকারীরা কেন ঢুকছে? বিএসএফ কিছুতেই এই দায় এড়াতে পারে না।
  • Link to this news (বর্তমান)