উৎসবে শামিল হতে মায়ের আরাধনা, দুর্গাপুজো একসূত্রে বেঁধেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডকে
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: পুজো দেখতে এলাকার বাসিন্দাদের অনেক দূরে যেতে হতো। কিন্তু গ্রাম থেকে বেরনোর রাস্তা কাঁচা। বৃষ্টি হলে খানাখন্দে ভরা কাঁচা রাস্তা জলকাদায় ভরে যায়। আবার রোদ উঠলে গোড়ালি সমান ধুলো। ফলে ইচ্ছে থাকলেও দূরবর্তী এলাকায় পুজো দেখতে যাওয়া সম্ভব হতো না। পুজোর কয়েকটা দিন মনখারাপ হয়ে থাকত সকলের। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীরা নিজেদের এলাকায় পুজোর পরিকল্পনা করেন। এই সিদ্ধান্তই একসূত্রে বেঁধেছে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডকে। পুজোর আনন্দে শামিল হন দু’রাজ্যের মানুষ। তাঁদের যৌথ উদ্যোগেই পাঁচ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে।
মুরারইয়ের শেষপ্রান্তে দামোদরপুর ও পিল্লুপুর গ্রাম। দামোদরপুর বাংলার ও পিল্লুপুর ঝাড়খণ্ডের অন্তর্গত। তবে এখানে দুই রাজ্যের বাংলাভাষী মানুষ মিলেমিশে একাকার। রাজবংশী, কর্মকার, মুসলিম, রাজপুত মিলিয়ে প্রায় হাজার দেড়েক মানুষের বসবাস। সকলেই কৃষিজীবী বা দিনমজুর। দুই রাজ্যের বাসিন্দা থেকে পড়ুয়াদের স্কুল, বাজার থেকে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে মুরারইয়ের রাজগ্রামে আসতে হয়। আগে গ্রাম থেকে রাজগ্রাম যাওয়ার পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা ছিল। জলকাদায় পিছলে পড়ে গিয়ে জখম হতেন গ্রামবাসীরা। বিকল্প রাস্তাও নেই। গ্রামে দুর্গাপুজো না হওয়ায় সাইকেল চালিয়ে বা হেঁটে আশপাশের গ্রামে ঠাকুর দেখতে যেতে হতো। খারাপ রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটায় অনেকে ছেলেমেয়েদের ছাড়তে চাইতেন না। ফলে দূর থেকে ঢাকের বাজনা শুনে এই গ্রামের বাসিন্দাদের পুজো কাটত। মন খারাপ হয়ে থাকত বাড়ির মহিলা থেকে ছোটদের। সেই আক্ষেপ মেটাতে ২০১৯সালে দুই রাজ্যের মানুষজন মিলে দুর্গাপুজো করার উদ্যোগ নেন। গ্রামবাসীদের দানেই ঝাড়খণ্ড বাংলা সীমান্তে দুর্গামন্দির গড়ে ওঠে। ২০২১সালে সেই মন্দিরে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে দেবীর পুজো শুরু হয়। এবার তাঁদের পুজো পঞ্চম বর্ষে পড়ল। তবে রাস্তার হাল এখনও ফেরেনি।
গ্রামবাসী অশোক কর্মকার বলেন, পুজোর সময় এলাকার মহিলা, শিশু থেকে সকলের মন খারাপ হয়ে থাকত। এখন গ্রামে পুজোর আয়োজনে সকলেই খুশি। গ্রামের বধূ রাধো কর্মকার, মেনি রাজবংশীরা জানান, বাঙালি হয়েও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আনন্দের স্বাদ পেতাম না। দুর্গাপুজো না থাকলে কোথাও ফাঁকা লাগত। এখন পুজোর সময় মণ্ডপে আড্ডা, একসঙ্গে ভোগ খেয়ে আনন্দ হয়। পিল্লুপুরের বাসিন্দা হর রাজবংশী বলেন, আগে এই গ্রামে কার্তিক ও অন্নপূর্ণা পুজোই উৎসব ছিল। দুই রাজ্যের বাসিন্দারা মিলিতভাবে দুর্গামন্দির তৈরির জন্য জমি থেকে অর্থ দান করেছেন। সকলের লক্ষ্য, আন্তরিকভাবে পুজো চালিয়ে যাওয়া।
পুজোর আর বাকি মাত্র কয়েকদিন। মূর্তি গড়ার কাজ চলছে। এখন গ্রামবাসীরাই মন্দিরে নতুন রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। আট থেকে আশি সকলের এখন ঠিকানা দুর্গামন্দির চত্বর। দেবী দুর্গার আবাহনই দুই রাজ্যের মানুষকে এক সূত্রে বেঁধেছে। তবে মন্দিরটি যেখানে নির্মাণ হয়েছে সেটি ঝাড়খণ্ডের অর্ন্তগত। তাই এরাজ্যের পুজোর অনুদান পান না তাঁরা। স্বাধীনতার এত বছর পরও পাকা রাস্তা না হওয়ার ক্ষোভ ও আক্ষেপ দুটোই রয়েছে এলাকাবাসীর। যদিও দামোদরপুরের বাসিন্দা তথা রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গণেশ রাজবংশী বলেন, ওই পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাটি পাকা করার জন্য পথশ্রী প্রকল্পে প্রস্তাব দেওয়া আছে। আশা করি দ্রুত অনুমোদন মিলবে।