দলের নির্দেশ মেনে পদত্যাগ না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়লেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি...
আজকাল | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে নিজের পদ থেকে সরে না দাঁড়ানোই এবার 'কড়া' পদক্ষপের মুখে পড়লেন। গত কয়েকদিন ধরে 'পলাতক' থাকার পর সাগরদিঘি থানার পুলিশের একটি দল বুধবার বিকেলে তাঁকে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এলাকা থেকে আটক করেছে বলে জানা গিয়েছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার কোনও শীর্ষ আধিকারিক মসিউর রহমানকে 'আটক' করা নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও, ঘটনার সত্যতা তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে সন্তুষ্ট না হলে মসিউরকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মসিউর রহমানকে দু'বার চিঠি লিখে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। খলিলুর রহমানের চিঠিতে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে, 'সাগরদিঘি ব্লকের কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা প্রসঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি আপনাকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন'।
যদিও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে এবং নিজের পদ থেকে সরে না দাঁড়িয়ে মসিউর রহমান গত বেশ কিছুদিন ধরেই 'পলাতক' ছিলেন।
তবে মসিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বুধবার সকালে দাবি করেন,' উনি কোনও দুর্নীতি করেননি, তাই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না। বর্তমানে উনি অসুস্থ থাকায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।'
তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বিকাশ নন্দ বলেন, 'দলের হুইপ মেনে মসিউর রহমানের উচিত ছিল এতদিনে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। ব্যক্তি কখনও দলের থেকে বড় হতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশ অনুসারে দলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান, মসিউরকে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও উনি সকলকে যেভাবে অবজ্ঞা করছেন তাতে তাঁর বিরুদ্ধে 'কঠোর' ব্যবস্থা প্রত্যাশিত ছিল। উনি যেভাবে অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশ অমান্য করে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করছেন তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।' প্রসঙ্গত, গত ২৬ অগাস্ট তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলার সমস্ত বিধায়ক এবং সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন পদাধিকারীদের সঙ্গে কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে অভিষেক ব্যানার্জি এবং সুব্রত বক্সীর বৈঠকের সময় মসিউর রহমানের প্রসঙ্গ উঠে আসে। মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে সাগরদিঘি ব্লকে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের একাধিক মহিলা তৃণমূল সদস্যের সঙ্গে 'দুর্ব্যবহার' এবং 'কটূ' কথা বলার অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা পড়েছিল।
মহিলাদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের অপরাধের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস 'জিরো টলারেন্স' নীতি নিয়ে চলায় অভিষেক ব্যানার্জি ওই বৈঠকের মধ্যেই খলিলুর রহমানকে নির্দেশ দেন মসিউর রহমানকে যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজের পদ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিষেক ব্যানার্জির কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর সেদিন রাতেই খলিলুর রহমান, মসিউরকে ফোন করে তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মসিউর রহমান সেই নির্দেশে কর্ণপাত না করায় সাংগঠনিক জেলা সভাপতি , পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অভিষেক ব্যানার্জির দেওয়া নির্দেশের কথা উল্লেখ করে নিজের পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য আবারও ফোন করে ও চিঠি লিখে নির্দেশ দেন।
কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ না মেনে মসিউর রহমান নিজের ফোন বন্ধ করে 'পালিয়ে' বেড়াচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন ,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার যে অভিযোগ উঠেছে সেই সংক্রান্ত একটি মামলায় তিনি ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত এক মহিলা কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে 'দুর্ব্যবহার ' এবং 'কটূ' কথা বলার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছেন এক ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক। এছাড়াও মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিকদের মারধর করা, সরকারি পাট্টা দেওয়া জমি দখল করা-সহ অতীতে একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত মসিউর নিজের মোবাইল ফোন চালু রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে এই আশঙ্কা বাড়তে থাকায় তিনি নিজের ফোনটি বন্ধ করে দেন।
জানা গিয়েছে, মসিউরের সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে বুধবার জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার আধিকারিকরা তাঁর সন্ধান পান। পুলিশ সূত্রের খবর, মসিউর কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের কাছে একটি জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন। জঙ্গিপুর পুলিশের একটি বিশেষ দল বুধবার বিকেলে তাঁকে গোপন ডেরা থেকে 'আটক' করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া গেলে এবং তদন্তে সহযোগিতা না করলে বুধবার গ্রেপ্তার হবেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।