• জেলার চাষিদের মন জয়ে ‘নীল নকশা’ কৃষকসভার
    আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বছর ঘুরলেই বাজবে বিধানসভা ভোটের দামামা। শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের ভোট-ভবিষ্যৎ অনেকাংশে স্থির করেন কৃষকেরা। এক সময় সিপিএমের দুর্গ হলেও এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই লড়ছেন বামেরা। আগামী ৬-৭ সেপ্টেম্বর ভাতারে সিপিএমের কষক সংগঠন কৃষকসভার জেলা সম্মেলনে কৃষকদের মনজয়ের ‘নীল নকশা’ তৈরি করবে সিপিএম।

    কৃষকসভার জেলা সম্মেলনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ভাতারকে। ঘটনাচক্রে, এই ভাতারেরই দু’টি এলাকায় সম্প্রতি লাল পতাকা হাতে ‘চাষের জমি পুনর্দখলের’ আন্দোলন করেছেন কৃষকদের একাংশ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্মেলনকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি, স্বাস্থ্য এবং রক্তদান শিবির, কৃষি বিষয়ক সেমিনার হবে। ভাতার বাজারে বর্ধমান-কাটোয়া রাস্তার উপরে কয়েক দিন আগে বসানো হয়েছে তোরণ। আজ, বৃহস্পতিবার নর্জা কাগজকল কারখানার সামনে ‘খড়ি নদী বাঁচাও’ কর্মসূচি হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠকেরা। দূষণ ওখানে বড় সমস্যা।

    জেলার ২৩টি ব্লকে কৃষকসভার শাখা সংখ্যা ২৯। কেন ভাতারকে জেলা সম্মেলনের জন্য বেছে নেওয়া হল? কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে ভাতার ব্লক কৃষকসভার দুই কমিটির উদ্যোগে সাহেবগঞ্জ ১ পঞ্চায়েতের কাশীপুর এবং আমারুন ২ পঞ্চায়েতের খেড়ুর ছাতনি গ্রামে কৃষকেরা লাল পতাকা কাঁধে নিয়ে মাঠে নেমে, তাদের থেকে জোর করে কেড়ে নেওয়া জমি পুনরুদ্ধার করে ধান রোপণ করেছেন। ভাতার কৃষক আন্দোলনের শক্তিশালী জায়গা। সারা বছর সংগঠনের নেতৃত্বে কৃষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি, পথসভা হয়।’’

    রাজনৈতিক মহলের একাংশের পর্যবেক্ষণ, বামেদের কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের সক্রিয়তা জেলায় আগের থেকে বেড়েছে। কৃষকদের দাবিদাওয়ার প্রশ্নে তুলনায় বিজেপি অনেকটাই নিষ্প্রভ। এটা বুঝেই কৃষকসভার সম্মেলনকে উপলক্ষ করে জেলায় বিরোধী পরিসর দখলের চেষ্টা করছেন বামেরা।

    কৃষকসভার জেলা সম্পাদক সমর ঘোষ বলেন, ‘‘বহু আন্দোলনের সাক্ষী ভাতার ব্লকেই জেলা সম্মেলন হবে। ৩৪৫ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেবেন। কৃষকদের দুর্দশা, কৃষিকে সঙ্কট-সহ বিভিন্ন সমস্যা সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু হবে। এ ছাড়া, মেদিনীপুর থেকে উত্তরবঙ্গের সংযোগের লক্ষ্যে রাস্তা নির্মাণের জন্য পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান সদর, ভাতার, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম প্রভৃতি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকের জমি জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার যে চেষ্টা চলছে, সে বিষয়টিও সম্মেলনে উঠে আসবে।’’ ভাতার ব্লক কৃষকনেতার নেতা সুভাষ মণ্ডল, নজরুল হকদের দাবি, ‘‘চাষের জন্য বিদ্যুৎ ও সারের দামবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন চাপে কৃষকেরা দিশেহারা। বর্তমান সরকার নামমাত্র সরকারি অনুদানের মাধ্যমে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর নাটক করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিমার টাকা শাসকদলের নেতারাই আত্মসাৎ করছেন।’’ তৃণমূল অবশ্য বিষযটিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ভাতার ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাসুদেব যশ বলেন, ‘‘৩৪ বছরের বাম শাসনে রাজ্যের কৃষকদের সামান্য উন্নতিও হয়নি। আমাদের সরকার ১৪ বছর ধরে কৃষকবন্ধু, কিসান ক্রেডিট কার্ড, শস্যবিমা, ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান, ফসলের ন্যায্য দাম, গৃহহীন খেত মজুরদের পাট্টা দান, কৃষিঋণ মকুব-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)