রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনুপ্রবেশ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। অবৈধ ভোটারদের ধরতে ভোটার তালিকার প্রস্তাবিত নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) পক্ষেও জোরদার সওয়াল করা হচ্ছে।তবে এসআইআর হলে আখেরে দলের কতটা লাভ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জেলা বিজেপির অন্দরেই। মূলত সংখ্যালঘু বুথগুলিই এক্ষেত্রে তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
প্রশাসনের বুথ লেভেল অফিসারদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে নিযুক্ত বুথ লেবেল এজেন্টরা (বিএলএ-২) বুথভিত্তিক প্রকৃত ভোটার যাচাই করার কথা। তবে জেলার সংখ্যালঘু বুথগুলিতে দলের বুথ কমিটিই গড়ে তুলতে পারেনি বিজেপি। বিএলএ দেওয়ার অবস্থাও অধিকাংশ সংখ্যালঘু বুথগুলিতে বিজেপির নেই।
দলীয় সূত্রে খবর, সদ্য দলের তরফে বিএলএ নিয়োগের কাজ কেমন চলছে তা নিয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই বৈঠকে সংখ্যালঘু বুথগুলিতে বিএলএ দেওয়ার বিষয়ে জোর দেন তিনি। তবে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর— বিজেপির দুই সাংগঠনিক জেলাতেই সংখ্যালঘু বুথগুলিতে দলের সংগঠন নেই।
সূত্রের খবর, দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলায় ১৯৮৬টি বুথের মধ্যে ১৬৯২টি বুথে বিএলএ দেওয়া গিয়েছে। যে ২৯৪টি বুথে দেওয়া যায়নি তার সবই সংখ্যালঘু বুথ বলে দাবি দলীয় নেতৃত্বের একাংশের। অন্য দিকে, বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় ১৯৪৪টি বুথের মধ্যে ৪১টি বুথ সম্পূর্ণ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। দলীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি, ওই বুথগুলির মধ্যে প্রায় আটটি বুথে কিছু সংখ্যালঘু কর্মী থাকলেও বাকি বুথগুলিতে দলীয় কর্মীই নেই। ফলে সেগুলিতে বিএলএ ২ দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলের রাজ্য নেতৃত্ব অন্য বুথ থেকে কাউকে বাছাই করে বিএলএ নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও বিজেপির এক প্রবীণ জেলা নেতা বলেন, “রাজ্য সরকার এসআইআর চাইছে না। তাই প্রশাসনের লোকজনের এ নিয়ে সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিএলএ ২ না থাকলে সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে আদৌ প্রকৃত ভোটার যাচাইয়ের কাজ নিয়মনীতি মেনে হচ্ছে কি না বুঝব কী ভাবে? অন্য বুথ থেকে কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সেখানকার সকল ভোটারদের চেনেন কি না, তা নিয়েও সংশয় থেকে যাবে।” ফলে গোটা বিষয়টিতে ফাঁক থেকে যাবে বলেই আশঙ্কা দলের একাংশের।
যদিও বিজেপি নেতৃত্ব নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার কথা বলছেন। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তি, বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচন কমিশনের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অন্য বুথ থেকে হলেও সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে আমরা বিএলএ দেবই।”
তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তারাশঙ্কর রায়ের কটাক্ষ, “ভোটে জিততে গেলে এসআইআর-এর থেকেও বেশি দরকার জনগণের সমর্থন, যেটা বিজেপির নেই। ওরা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বাংলায় ছল-চাতুরি করতে এলেও পারবে না। মানুষই রুখে দেবেন।”