• কন্টেনার সরাসরি বেনাপোলে, আর্থিক ক্ষতি ব্যবসায়ীদের
    আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পণ্য বাণিজ্য সাম্প্রতিক সময়ে কমে গিয়েছে। এর ফলে পেট্রাপোল কেন্দ্রিক অর্থনীতির উপরে প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি বাইরের রাজ্য থেকে আসা পণ্য ভর্তি কন্টেনারগুলি পেট্রাপোল বন্দরে এসে সরাসরি বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে ঢুকে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসা, ট্রাক মালিক, শ্রমিক, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক, বনগাঁর গুদাম মালিকেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই সমস্যা নিয়ে জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীকে চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ করার আবেদন করেছেন বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”

    চিঠিতে পুরপ্রধান জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রাজ্যের বাইরে থেকে পণ্য রফতানির উদ্দেশ্যে সরাসরি বড় কন্টেনারে পেট্রাপোল সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বনগাঁ শহরের অভ্যন্তরে সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়ে এই কন্টেনারগুলি চলাচল করার ফলে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্ঘটনা বাড়ছে। জনজীবনের ক্ষতির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক খুঁটি, সৌন্দর্যায়নের জিনিসপত্রের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে, এই কন্টেনারগুলিতে সরাসরি সীমান্তে পণ্য পরিবহণের কারণে, স্থানীয় পরিবহণকারী, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক এবং গুদাম মালিকেরাও কাজের অভাবে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

    আগে এই কন্টেনারগুলি বনগাঁয় প্রবেশ করে বিভিন্ন গুদামে পণ্য খালাস করে ফিরে যেত। রফতানিকারীরা পরে স্থানীয় ট্রাকে তাঁদের পণ্য নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে রফতানির জন্য পাঠাতেন। ফলে স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক, গুদাম মালিক, সকলেই উপকৃত হতেন। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থার ফলে, কাজের অভাবে সংশ্লিষ্ট সকলে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন বলে দাবি।

    পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁর একটি বড় অংশের মানুষ পেট্রাপোল বন্দরে কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। ফলে তাঁরা এই ব্যবস্থায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বনগাঁ এলাকা প্লাবিত, তাই বেশিরভাগ মানুষের কাজ নেই। এই পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।

    পুরপ্রধান চিঠিতে জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের তৎকালীন প্রধান সচিব রাজীব কুমার এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসায়ী, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক এবং বনগাঁর গুদাম মালিকদের কাজ দেওয়ার জন্য বাইরে থেকে আসা কন্টেনারগুলি স্থানীয় গুদামে খালাস করা হবে। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পেট্রাপোলে কাজের সঙ্গে যুক্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

    পুরপ্রধান জানিয়েছেন, জেলাশাসকের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, পেট্রাপোল বন্দরের উপরে নির্ভরশীল বনগাঁর স্থানীয় পরিবহণকারী, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক এবং গুদাম মালিকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে। যাতে বাইরে থেকে বনগাঁয় আসা সমস্ত কন্টেনার স্থানীয় গুদামে খালাস করা যায়। পুরপ্রধান বলেন, “এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে বনগাঁ শহরে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি জনসাধারণের ক্ষতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে। পেট্রাপোল বন্দরের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। বনগাঁর আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সদর্থক প্রভাব পড়বে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)