চালু রয়েছে ‘আমার পাড়া, আমার সমাধানের’ (আপাস) কর্মসূচি। সমান্তরালে চলছে টাকার উৎস সন্ধানের কাজও। এতে অনেকগুলি উৎসের মধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের (এসডিআরএফ) অর্থের একাংশে আপাসে প্রস্তাবিত কিছু সড়ক-পরিকাঠামোর কাজ করানো যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল প্রশাসন। সম্প্রতি এসডিআরএফ-এ যে নতুন ক্ষেত্র নির্বাচনের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে কাঠামো, বাড়ি, বা দেওয়াল ভেঙে পড়ার ঘটনাগুলিকে এসডিআরএফ ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোনও রাস্তাকে এর আওতায় আনা যেতে পারে। তাই হয়তো কাঠামো বা বাড়ি সংক্রান্ত ক্ষেত্রটি সংযোজিত হয়েছে।
আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এসডিআরএফ তহবিলে ৭৫% থাকে কেন্দ্রীয় অর্থ এবং বাকি ২৫% রাজ্যের। মোট তহবিল অঙ্কের ১০% নিজস্ব নির্বাচিত ক্ষেত্রে খরচ করতে পারে রাজ্য, তবে তা বিপর্যয় সংক্রান্ত ঘটনায়। সেই সূত্রে মোট ১৪টি ক্ষেত্র এর তালিকাভুক্ত হয়েছে।
সরকারি সূত্রের দাবি, ১০ শতাংশের হিসেবে প্রায় ৭০৩.৫০ কোটি টাকা ১৩টি দফতরের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। তার মধ্যে পঞ্চায়েত দফতরের ভাগে রয়েছে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা। বলে দেওয়া হয়েছে, এই অর্থ গ্রামীণ রাস্তার মেরামত বা পুনর্গঠন খাতের জন্য। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে রাস্তা, পথ-আলো, নিকাশি, জল সরবরাহের পরিকাঠামো মেরামতির খাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কলকাতা পুরসভাও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সারাই-সহ বেশ কিছু কাজের খাতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে ‘রেমাল’ ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামোগুলি সংস্কারের উল্লেখ রেখেছে রাজ্য।
এই বিপর্যয় ঘটেছিল ২০২৪ সালের মে মাসে। ২০২১-২২ থেকে ২০২৪-২৫ সাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামোগুলি মেতামতের খাতে সেচ দফতর পেয়েছে প্রায় ১৬৬ কোটি টাকা। আবার ‘রেমাল’, ‘দানা’ বিপর্যয় এবং ২০২৪ সালের বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষতি মেরামতের খাতে বিদ্যুৎ দফতরও পেয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। তবে আধিকারিকদের একাংশের দাবি, “এই অর্থে নতুন করে শুধু মেরামতির কাজই এখন যে শুরু হবে তা হয়তো নয়, বরং দফতরের নিজস্ব বরাদ্দ থেকে ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া কিছু খরচের ফেরতও এর মধ্যে থাকতে পারে।”
জেলা প্রশাসনগুলির একাংশ জানাচ্ছে, আপাস কর্মসূচিতে এলাকার মানুষ নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরতে পারেন। তাঁদের এলাকায় কী প্রয়োজন, প্রশাসনকে জানাতে পারেন তা। তার ভিত্তিতে নির্বাচিত কাজ তালিকাভুক্ত হবে। সেই কাজগুলি করিয়ে ফেলা হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। সব মিলিয়ে এই কর্মসূচিতে আট হাজার কোটি টাকা খরচের কথা ঘোষণা করেছিল নবান্ন। তার পর থেকেই শুরু হয় টাকার উৎস সন্ধানের কাজ। প্রাথমিক ভাবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দকে এ কাজে অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বাছা হলেও, চলতি আর্থিক বছরের বরাদ্দ আপাতত আটকে থাকায় সেই পথ থেকে সরে আসে রাজ্য। অপর কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্প—জলজীবন মিশন এবং স্বচ্ছভারত মিশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থান নিতে হয় নবান্নকে। পরে জেলা-কর্তাদের ফের জানানো হয়, বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সারাইয়ের জন্য এসডিআরএফ তহবিলকে বিবেচনা করা হচ্ছে। পুর এলাকায় আপাসের কিছু কাজের খরচ করা যেতে পারে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে। জল সংক্রান্ত কাজের ভার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাকিটা আপাসের তহবিল থেকে খরচের লক্ষ্য রেখেছে রাজ্য। ইতিমধ্যে আপাসের প্রস্তাবিত কাজগুলির জন্য টেন্ডার ডাকার বার্তাও পেয়েছেন জেলা-কর্তারা।
প্রসঙ্গত, এসডিআরএফ-এর অধীনে বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ড (অ্যাক্সিডেন্টাল), প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া, নৌকাডুবি, টর্নেডো বা ঝড়-বজ্রপাত, বিষাক্ত পশুর কামড়ে মৃত্যু, তাপপ্রবাহ, বিদ্যুৎপৃষ্ট, গাছ পড়া, বন্য পশুর আক্রমণ, কাঠামো-বাড়ি-দেওয়াল ভেঙে পড়া, নদী বা উপকূল ক্ষয়, জঙ্গলে আগুল লাগা এবং ভারী বৃষ্টিপাতকেরাখা হয়েছে।