নিয়োগ দুর্নীতি: সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেয়ে গেলেন পার্থ! তবে মুক্তি মিলছে না
আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়! বুধবার নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে জামিন পেয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তবে জামিন পেলেও এখনই পার্থের জেলমুক্তি হচ্ছে না। প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলাতেও অন্যতম অভিযুক্ত পার্থ। তাই আপাতত জেলেই থাকতে হবে তাঁকে।
বুধবার আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন পার্থ-সহ নিয়োগ মামলায় অভিযুক্তেরা। তাঁরাও জামিন পেয়ে গিয়েছেন। জামিন পেয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী ও তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীও। যদিও সিবিআইয়ের তরফে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। তাদের দাবি ছিল, প্রতিটি মামলার চরিত্র আলাদা। কোনও মামলার সঙ্গে অন্যটির মিল নেই। তা ছাড়া, সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, এই দুর্নীতি সমাজে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। এই সব নানা যুক্তিতে জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু শেষমেশ জামিন পেয়েছেন পার্থ। উল্লেখ্য, আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন তিনি। তবে একই দুর্নীতি সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলায় এখনও জামিন হয়নি তাঁর। ওই মামলা এখনও বিচারাধীন। সেই আবহে এ বার নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জামিন হল প্রাক্তন মন্ত্রীর। সাত হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেয়েছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালে। নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২২ সালের ২২ জুলাই পার্থের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এর পর ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও। নিয়োগ দুর্নীতিতে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ওই বছরই ২৩ জুলাই পার্থ এবং অর্পিতাকে গ্রেফতার করে ইডি। ২৭ জুলাই অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। সঙ্গে মেলে বহুমূল্য গয়নাও। ইডির দাবি, সব মিলিয়ে অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে নানা বৈদেশিক মুদ্রাও মিলেছিল। ইডির দাবি, সোনাদানা, ফ্ল্যাট-বাড়ি মিলিয়ে কম করে ৬০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পরবর্তী কালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই-ও গ্রেফতার করে পার্থ এবং অর্পিতাকে। সিবিআইয়ের প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতেও নাম জড়ায় পার্থের। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। সম্প্রতি এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। গত শুক্রবার গ্রুপ সি মামলাতেও আলিপুর আদালতে শেষ চার্জশিট জমা পড়েছে। এর আগে ওই মামলায় আরও দু’টি চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। সব মিলিয়ে চারটি চার্জশিট জমা পড়েছে। ২০২২ সালে এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত শুরুর ৫১ দিনের মাথায় যে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে পার্থ ছাড়াও নাম ছিল সমরজিৎ আচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত প্রার্থী দীপঙ্কর ঘোষ, সুব্রত খাঁ, অক্ষয় মণি, ইদ্রিস আলি মোল্লা প্রমুখের। শেষ চার্জশিটে অবশ্য নতুন করে কারও নাম নেই। তবে কিছু নতুন তথ্যপ্রমাণ এবং নথি রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।