কলকাতায় না-আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘স্বস্তি দিয়েছেন’ জাভেদ! তর্কবিতর্ক আর এগোতে চায় না তৃণমূল
আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাভেদ-বিতর্কে আর ইন্ধন নয়। সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতারা।
গীতিকার তথা কবি জাভেদ আখতারের কলকাতা সফর বাতিল হওয়ার পরও বিতর্ক থামছিল না। বিতর্ক তৈরি করেছিল শাসকদলেরই কয়েক জন সংখ্যালঘু নেতার আক্রমণাত্মক বিবৃতি। ফলে অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। কলকাতায় যে অনুষ্ঠানে জাভেদের আমন্ত্রণ ছিল তার আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উর্দু অ্যাকাডেমি। অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে জাভেদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নাদিমুল হক, যিনি রাজ্যসভায় তৃণমূলের তিন বারের সাংসদ। তার পর থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়। জাভেদ না-আসার কথা জানানোর পরেও বিতর্ক থামছিল না। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে সম্প্রতি বৈঠক করে দলের সংখ্যালঘু নেতারা ঠিক করেছেন, এ বিষয়ে আর কোনও বিবৃতি দেওয়া হবে না। জাভেদের কলকাতার অনুষ্ঠান বাতিল সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের মুখে পড়লে মৌনই থাকবেন তাঁরা।
‘হিন্দি সিনেমায় উর্দু’ শীর্ষক একটি আলোচনাকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমি। ৩১ অগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুশায়রা এবং আলোচনাসভার অনুষ্ঠানসূচি ছিল। কলকাতায় আয়োজিত চারদিন ব্যাপী ওই অনুষ্ঠানে ভারতীয় চলচ্চিত্রে উর্দুর ভূমিকার উপর আলোচনা, শায়েরি পাঠ এবং সাংস্কৃতিক বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। সেখানেই জাভেদকে ১ সেপ্টেম্বরের মুশায়রায় প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ কথা জানামাত্রই প্রধানত দু’টি ইসলামি সংগঠন জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ (কলকাতা শাখা) এবং ওয়াহইন ফাউন্ডেশন আখতারের আমন্ত্রণকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা বলে অভিযোগ তোলে। জমিয়ত উলেমার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান আরিফ প্রচারপত্র ছাপিয়ে আখতারকে ‘অমানুষ, শয়তানের অবতার’ বলেও উল্লেখ করেন। জাভেদের একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয়। এ প্রসঙ্গে বিতর্ক বাড়িয়ে দেন রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।
জাভেদের কলকাতায় আসার বিরোধিতা করে দলকে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে দেন সিদ্দিকুল্লা। পাশাপাশি রাজ্যের আরও এক সংখ্যালঘু মন্ত্রী নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে উর্দু অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানটি বাতিল করার আবেদন জানান। তৃণমূল সূত্রে খবর, অনুষ্ঠানের আয়োজক সাংসদ নাদিমুল এবং ক্ষোভ প্রকাশ করা সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তার পরেই সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু জাভেদ ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে কলকাতায় আসেননি, তাই এ বিষয়ে আর অহেতুক বিতর্ক বাড়িয়ে লাভ নেই। এ প্রসঙ্গে দলের সংখ্যালঘু নেতারা মৌনব্রতই পালন করবেন।
শাসকদলের এক সংখ্যালঘু নেতার কথায়, ‘‘দলের যে সব সংখ্যালঘু নেতার মনে জাভেদ আখতারের কলকাতা সফর নিয়ে ক্ষোভ জন্মেছিল, তাঁরা সকলেই নিজের ক্ষোভ মুক্ত মনে দলকে জানিয়েছিলেন। যেহেতু জাভেদ আখতার নিজেই অনুষ্ঠানে আসতে অস্বীকার করেছেন, তাই এ ক্ষেত্রে আর আমাদের কোনও দায় নেই। তাই এ বিষয়ে আমরা একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই বিতর্কে আর কোনও আলোচনা বা মন্তব্য করা হবে না।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘এ প্রসঙ্গে আর কথা বলার অর্থ হচ্ছে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। আমরা কেউই তা চাই না। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে জাভেদ চ্যাপ্টার আপাতত তৃণমূলের কাছে ক্লোজ়ড হয়ে গিয়েছে।’’ জাভেদ অবশ্য নিজেও এই ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং এটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায় ধর্মীয় মৌলবাদীদের উদ্দেশে অভিযোগ, ‘‘হিন্দু কিংবা মুসলমান মৌলবাদ— আমি উভয়েরই সমালোচনার মুখে পড়ি। যখন দু’পক্ষই আমাকে নিয়ে কথা বলে, তখন বুঝি সঠিক পথে রয়েছি।”