• গোলশূন্য ড্র ভবানীপুরের, লিগে সুপার সিক্সে এখনও উঠতে পারে ডায়মন্ড হারবার! শুক্রবার চাই ড্র, বিপক্ষে ‘দুর্বল’ সাদার্ন সমিতি
    আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত নাটকের পর বুধবার নজর ছিল কলকাতা লিগের ভবানীপুরের ম্যাচের দিকে। তারা গোলশূন্য ড্র করল ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবের বিরুদ্ধে। সৃঞ্জয় বসুর ভবানীপুর বুধবারের ম্যাচ ড্র করায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবারের সুপার সিক্সে যাওয়া নিশ্চিত হল না। যার জন্য শেষ ম্যাচে তাদের ১ পয়েন্ট দরকার। শুক্রবার সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ড্র করলেই ডায়মন্ড হারবার সুপার সিক্সে চলে যাবে। জিতলে তো বটেই। সেই ম্যাচে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার হেরে গেলে পরের রাউন্ডে যাবে সৃঞ্জয়ের ভবানীপুর।

    আপাতত লিগে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে ইউনাইটেড এসসি। ১২ ম্যাচ খেলে তাদের পয়েন্ট ২৭। দ্বিতীয় ইউনাইটেড কলকাতা। ১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট। ভবানীপুর বুধবার ১ পয়েন্ট পাওয়ায় গোলপার্থক্যে ডায়মন্ড হারবারকে টপকে তারা তৃতীয় স্থানে চলে এল। তবে তাদের আর কোনও ম্যাচ বাকি নেই। পক্ষান্তরে, ডায়মন্ড হারবারের একটি ম্যাচ বাকি। পয়েন্ট তালিকা বলছে, ভবানীপুরের ১২ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট এবং ডায়মন্ড হারবারের ১১ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট। অর্থাৎ, দু’দলের পয়েন্ট সমান। শেষ ম্যাচ ড্র করলে ডায়মন্ড হারবারের পয়েন্ট হবে ২৩। তারা পরের রাউন্ডে চলে যাবে। হেরে গেলে অবশ্য ভবানীপুর সুপার সিক্সে যাবে। কারণ, গোলপার্থক্যে ডায়মন্ড হারবারের (৮) থেকে এগিয়ে ভবানীপুর (১৪)। ঘটনাচক্রে, ডায়মন্ড হারবারের শেষ ম্যাচ যাদের বিরুদ্ধে, সেই সাদার্ন গ্রুপে সকলের নীচে রয়েছে। ১১টি ম্যাচ খেলে একটিও জিততে পারেনি তারা। ৯টি ম্যাচ হেরে গিয়েছে। খেয়েছে ২৫টি গোল! ফলে তারা ডায়মন্ড হারবারের সামনে প্রতিপক্ষ হিসাবে খানিকটা ‘দুর্বল’।

    প্রসঙ্গত, বুধবার ভবানীপুর হেরে গেলে তারা ২১ পয়েন্টেই থাকত। তখন শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার হেরে গেলেও তারা পরের রাউন্ডে চলে যেত। ফলে সেই ম্যাচের আর গুরুত্ব থাকত না। কিন্তু ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছে।

    মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন ভবানীপুর এই ম্যাচ খেলবে না বলে জানিয়েছিল, তখনই ময়দানে গুঞ্জন শুরু হয়। পরে বেশি রাতে তারা আগের সিদ্ধান্ত বদলে বুধবারের ম্যাচটি খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কেন প্রথমে না খেলার সিদ্ধান্ত? কেনই বা পরে সিদ্ধান্ত বদল?

    তখনই জল্পনা শুরু হয়। ডায়মন্ড হারবার এফসি-র কর্ণধার অভিষেক। ভবানীপুরের কর্ণধার সৃঞ্জয়। যিনি একদা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদও ছিলেন। এখনও শাসকদলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। বস্তুত, সৃঞ্জয় যে আবার মোহনবাগানের সচিব পদে ফিরতে পেরেছেন, তার পিছনেও নবান্নের ‘বরহস্ত’ রয়েছে। অন্যদিকে, অভিষেক শাসকদলের অঘোষিত দু’নম্বর। ফলে প্রশ্ন ওঠে, ভবানীপুরের না খেলার সিদ্ধান্ত এবং তার ফলে ডায়মন্ড হারবারের সুপার সিক্সে চলে যাওয়ার পথ খুলে যাওয়া কি নেহাতই কাকতালীয়?

    যদিও ম্যাচ না খেলতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সৃঞ্জয়ের দাবি ছিল, তাঁদের সুযোগ ছিল না। হাতে ফুটবলারও ছিল না। তাই ওই ম্যাচটা তাঁরা খেলতে চাননি। চুক্তি অনুযায়ী, ৩১ অগস্টের পর তাঁরা ফুটবলার ধরে রাখতে পারেন না। সৃঞ্জের দাবি, গত বছর থেকেই তাঁরা আইএফএ-কে বলছিলেন, লিগের প্রাথমিক রাউন্ড অগস্টের মধ্যেই শেষ করে দিতে। তা হলে যাদের পরের রাউন্ডে যাওয়ার আর সুযোগ থাকবে না, তারা ফুটবলারদের ছেড়ে দিতে পারবে। যারা সুপার সিক্সে উঠবে, শুধু তারাই ফুটবলার ধরে রাখবে।

    এর পরেই শুরু হয়েছিল নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক। তারা যে বুধবারের ম্যাচ খেলতে চাইছে না, এই খবর ছড়ানোর কিছু ক্ষণের মধ্যে ভবানীপুর সিদ্ধান্ত বদলে তড়িঘড়ি আইএফএ-কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, তারা বুধবার খেলবে। সূত্রের খবর, ম্যাচ না-খেলার সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মনে করার অবকাশ রয়েছে, এই মর্মে আলোচনা হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত বদল। সেই বদলের কারণ হিসাবে ভবানীপুর জানায় তারা ‘ফুটবল স্পিরিট’, ‘প্রতিযোগিতার মনোভাব’ এবং ‘স্পোর্টসম্যানশিপ’-এর কথা ভেবেই ম্যাচ খেলছে। সৃঞ্জয় বলেন, ‘‘কোচ আমাদের বলেছেন, হাতে যে ফুটবলার রয়েছে, তাদের দিয়েই উনি ম্যাচ খেলিয়ে দেবেন। ফলে আমরাও ফুটবলের স্বার্থে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

    সেইমতোই ম্যাচ হয়। যা গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়েছে। ভবানীপুর হেরে গেলে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার সহজেই সুপার সিক্সে চলে যেত। আর ভবানীপুর জিতলে ডায়মন্ড হারবারের সেই সুযোগ থাকত না। ম্যাচ ড্র হওয়ায় ডায়মন্ড হারবারের সামনে আরও ১ পয়েন্ট পেয়ে সুপার সিক্সে যাওয়ার সুযোগ রইল।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)