• মুর্শিদাবাদি সিল্ক নিয়ে কাজ করতে চাই: সঞ্জয় গর্গ
    এই সময় | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ডিজ়াইনার সঞ্জয় গর্গের ভারতীয় ফ্যাব্রিকের প্রতি ভালোবাসা ফুটে ওঠে তাঁর ব্র্যান্ড ‘র ম্যাঙ্গো’-র কালেকশনে। সম্প্রতি তিনি কলকাতায় এসেছিলেন এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দু’মিনিট চেয়ারে থিতু হয়ে বসা তাঁর কাছে বেশ কষ্টকর, বোঝা গেল। সাক্ষাৎকার দিতে-দিতে কখনও তিনি চা নিতে চলে গেলেন, কখনও আবার ফোনের বিভিন্ন সেটিং দেখাতে শুরু করলেন সবাইকে।

    কথায়-কথায় নিজেই বললেন, ‘আমি খুব অস্থির প্রকৃতির মানুষ। ধৈর্য কম। একটা গল্প বলি। আমি গাছ খুব ভালোবাসি। কারণ বেল, জুঁই, গোলাপের রং, গন্ধ কাছ থেকে না জানলে সেটা ফ্যাব্রিকে ব্যবহার করব কী করে? একবার বাগানে অনেক গাছ লাগিয়েছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলো বড় হতে সময় নিচ্ছিল। তখন আমি বাইরে থেকে বড় গাছ ট্রান্সপোর্ট করাই। বড়-বড় গাছ তুলে এনে বাগানে লাগিয়ে দিই। এ রকম গাছ বাঁচার সম্ভাবনা থাকে ৮০ শতাংশ। আমার গাছগুলো বেঁচে গিয়েছে।’

    বাঙালি মহিলাদের কথা মনে এলেই কেমন সাজের কথা মাথায় আসে তাঁর? জবাবে ডিজ়াইনার বলছেন, ‘আমি চোখ বন্ধ করে দেখতে পাই, খোলা চুল, বড় একটা টিপ, পিন না করে পরা সুতির শাড়ি আর খুব দৃঢ় একজন মহিলাকে। আমার কাছে বাঙালি মহিলার রূপ এ রকমই। পুজোর সময়ে আর আলাদা করে সাজতে হয় বলে মনে হয় না।’ বেশিরভাগ বাঙালিই ডাস্কি...কথা শেষ করতে না দিয়ে তিনি বললেন, ‘আমার কমপ্লেকশনও তাই। আমি বলব আমাদের কমপ্লেকশন হলো নিউট্রাল।’

    এই কমপ্লেকশনে কোন রঙের পোশাক পরলে মানায় ভালো? ‘যে কোনও ব্রাইট কালার। আপনি নিউট্রাল একটা ক্যানভাসে ব্রাইট রং দিন, দেখবেন পুরো মেজাজটাই বদলে গেল। আমাদের কমপ্লেকশনের জন্যও তাই ব্রাইট রং খুব উপযুক্ত’ বক্তব্য ডিজ়াইনারের। বাংলার সুতি, জামদানি, মুর্শিদাবাদি সিল্ক নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।

    বললেন, ‘এই নিয়ে প্রায় ১৫ বার কলকাতায় আসা হয়ে গিয়েছে। বাংলার নানা জায়গা ঘুরে দেখেছি, ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ করেছি। আমি এখানকার সুতি, জামদানি নিয়ে কাজ করতে চাই। মুর্শিদাবাদি সিল্ক নিয়ে অনেক কিছু করা যায়, চেষ্টা করব নতুন কিছু করার।’ এর সঙ্গে সঞ্জয়ের সংযোজন, ‘ডিজ়াইনারের কাজ হলো নতুন কিছু তৈরি করা। গতানুগতিক কাজ করে কোনও লাভ নেই। আমি মনে করি যদি নতুন কোনও ভাবনা টেবিলে না আনতে পারি, তা হলে সেই কাজটা করার প্রয়োজন নেই।’

    আগে আমিষ খেলেও এখন নিরামিষাশী হয়ে গিয়েছেন তিনি। জানালেন, কলকাতায় এসে ভাপা চিংড়ি, মাছের নানা পদ খেতেন কব্জি ডুবিয়ে। এখন সেই জায়গা নিয়েছে ঝালমুড়ি। রান্নার মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে তা নাকি খুব বেশি করে টানে ডিজ়াইনারকে। এই একই প্রসঙ্গ ধরে প্রশ্ন, ক্রিয়েটিভ মানুষেরা ব্যবসা সামলান কী করে?

    ‘ব্যবসা সামলানো বা বোঝার দরকার নেই। নিজের কাজটাকে বুঝতে হবে। আমি যেমন এই একটা কাজই করতে পারি। এই কাজটার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। আমি জানি কোন ফ্যাব্রিকের মার্কেট ভ্যালু কী। সেই মতো পোশাক ডিজ়াইন করি। ব্যবসা সেই স্বকীয়তার হাত ধরেই আসে। আলাদা করে পরিশ্রম করতে হয় না। তাই বলে কি সব এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়? একেবারেই না। কিন্তু ব্যর্থতা থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়,’ উত্তর সঞ্জয়ের।

    এখনকার যুগে ছবি পোস্ট করার অর্থই হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের নজরে পড়া। এই ট্রেন্ড নিয়ে ডিজ়াইনারের বক্তব্য কী? ‘এটা শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের ট্রেন্ড। খুবই দুঃখজনক। ছোটবেলায় যখন ফ্যাশন কী তা জানতামও না, দেখতাম হোলির সময়ে, দিওয়ালির সময়ে পোশাকের রং কেমন বদলে যেত। শাড়ির ফুলগুলো বদলে যেত। ফ্যাশন আসলে জীবনেরই একটা অংশ। এটা এখন আমরা ভুলতে বসেছি,’ বলছেন সঞ্জয়।
  • Link to this news (এই সময়)