• স্বেচ্ছায় যেকোনও বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে থাকতে পারবে একজন নারী, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়!...
    আজকাল | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের জবলপুর বেঞ্চ এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে পুনরায় স্পষ্ট করেছে যে, প্রাপ্তবয়স্ক নারী তাঁর নিজের পছন্দমতো ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করার মৌলিক অধিকার রাখেন। আদালত জানিয়েছে, এমন কোনও আইন নেই যা প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বনির্ধারিত মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন নারীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখতে পারে, এমনকি তিনি যদি ইতিমধ্যেই বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে থাকতে চান তাহলেও।

    বিচারপতি অমূল শ্রীধরন ও বিচারপতি প্রদীপ মিত্তলের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেন। রায়ে আদালত মন্তব্য করে— “যদি ওই নারী পরবর্তীতে সেই পুরুষকে বিয়ে করেন, তবে সেটি "non-cognizable offence" হবে। একমাত্র প্রথম স্ত্রীই তখন স্বামী ও দ্বিতীয় নারীর বিরুদ্ধে দ্বিবিবাহের অভিযোগে মামলা করতে পারবেন।”

    আদালতে হাজির ‘এক্স’ নামে পরিচিত এক তরুণীকে তাঁর পরিবার ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। তরুণীর বয়স ১৮ বছরের বেশি বলে নথিপত্রে নিশ্চিত করা হয়। জানা যায়, তিনি স্বেচ্ছায় একজন পুরুষের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আদালতে সরাসরি প্রশ্নের জবাবে তরুণী জানান, তিনি নিজের ইচ্ছায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকতে চান এবং বাবা-মার কাছে ফিরতে চান না।

    পিটিশনার পক্ষের আইনজীবী আয়ুষ শর্মা যুক্তি দেন, যেহেতু ওই পুরুষ ইতিমধ্যেই বিবাহিত, তাই ‘এক্স’-কে জোর করে বাপের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু আদালত স্পষ্ট জানায়, তরুণীর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াই এই মামলার মূল বিষয়। বেঞ্চ বলেন— “একজন প্রাপ্তবয়স্ককে পশুর মতো চালিত করা যায় না। তাঁর নিজস্ব মন, চিন্তাশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছে। সেটা সঠিক হোক বা ভুল, তিনি কাদের সঙ্গে থাকবেন সেটি তিনি নিজেই স্থির করবেন।”

    সরকারি পক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাডভোকেট জেনারেল অভিজিৎ আওয়াস্থি আদালতকে জানান, পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ওই পুরুষ ইতিমধ্যেই তাঁর প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে ডিভোর্সের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এই তথ্য নথিভুক্ত করে আদালত মন্তব্য করে— কেবলমাত্র বিবাহিত হওয়ার কারণে ওই পুরুষের সঙ্গে ‘এক্স’-এর বসবাসে কোনও আইনগত বাধা নেই।

    রায়ে বেঞ্চ স্পষ্ট করে দেয় যে, নৈতিকতার প্রশ্ন আদালতের কাজ নয়। আইনের আলোকে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্বাধীনতাকেই সুরক্ষিত করতে হবে। আদালত নির্দেশ দেন যে, ‘এক্স’ যেহেতু বাবা-মার কাছে ফিরতে রাজি নন, তাই তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।

    গোটেগাঁও (জেলা নার্সিংহপুর)-এর ডিএসপি মানীশ ত্রিপাঠীর মাধ্যমে পুলিশকে বলা হয়েছে দুটি শর্তে তরুণীকে মুক্তি দিতে হবে—১. তরুণীকে লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে যে তিনি নিজের ইচ্ছায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করছেন।২. সংশ্লিষ্ট পুরুষকেও লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি দিতে হবে যে তিনি তরুণীর সঙ্গ গ্রহণ করছেন।

    এই শর্ত পূরণ হলে, আদালত নির্দেশ দেয়, তরুণীকে মুক্তি দিয়ে তাঁর নির্বাচিত সঙ্গীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেয়।

    আদালতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ-

    “একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে তাঁর পছন্দের ব্যক্তির সঙ্গে বসবাসে কোনও আইন বাধা দিতে পারে না।”

    “নৈতিকতার ওপর আদালত ভাষণ দিতে পারে না। আদালতের দায়িত্ব আইনগত অধিকার রক্ষা করা।”

    “যদি তিনি বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করেন, তবে কেবলমাত্র প্রথম স্ত্রীই দ্বিবিবাহের মামলা দায়ের করতে পারবেন।”

    এই রায়কে আইনজগতে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি পুনরায় নিশ্চিত করল যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাই আইনগতভাবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
  • Link to this news (আজকাল)