• 'আই কুইট কর্পোরেট'! কর্মীর বিস্ফোরক মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই উত্তাল নেটপাড়া ...
    আজকাল | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুর এক কর্মী সম্প্রতি তাঁর কর্পোরেট জীবন থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছেন। 'আই কুইট কর্পোরেট' ( 'I Quit Corporate') শিরোনামে রেডিট-এ একটি পোস্ট করেন তিনি। এমনকী তাঁর এহেন সিদ্ধান্তের পেছনের কারণগুলোও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, ক্রমাগত কাজের চাপ, জীবনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং শহরের দুর্বল অবকাঠামো তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তুলেছে৷ পাশাপাশি তাঁর ক্যারিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করে।

    এই পোস্টটি ৩ সেপ্টেম্বর শেয়ার করার পর তা দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ৫০০-রও বেশি আপভোট পেয়েছে পোস্টটি। অনেক তরুণ পেশাজীবী এতে নিজেদের অভিজ্ঞতা খুঁজে পান। পোস্টটির সঙ্গে সহমত জানান তাঁরা। কেউ কেউ তাঁর দীর্ঘ যাত্রা, ভারসাম্যহীন জীবন এবং আর্থিক চাপ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

    ওই কর্মী জানিয়েছেন, ক্রমাগত কাজের চাপে তাঁর স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তিনি লেখেন, 'এখানে কোনও ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স নেই। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একপ্রকার ছেলেখেলা হয়ে গিয়েছে, শহরটা ট্র্যাফিকে দমবন্ধ। অবকাঠামো নেই বললেই চলে। মূল্যস্ফীতি আর ট্যাক্সের কারণে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করা সম্ভব না।'

    তিনি আরও জানান, শহরের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য তিনি স্থানীয় ভাষা শিখেছেন এবং এখানকার খাবারও পছন্দ করেছেন। 'আমি কন্নড় শিখেছি, বুঝি ৮৫ শতাংশ, কথা বলি ৬৫ শতাংশ, এটা শিখতে ১.৬ বছর লেগেছে। আমি ডোনে বিরিয়ানি হায়দরাবাদি বিরিয়ানির চেয়েও বেশি পছন্দ করি, কিন্তু তবুও এই শহর দমবন্ধ করে দিচ্ছে,'-তিনি লেখেন।

    তাঁর আরেকটি হতাশার জায়গা হল বেঙ্গালুরুতে অধিকাংশ কোম্পানির অবস্থান, যা তিনি রিয়েল এস্টেটের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন। পোস্টে লেখা ছিল, 'আমার মনে হয় আরও অনেক শহর আছে যাদের ভালো অবকাঠামো রয়েছে, সেখানে কোম্পানিগুলো ভাগ করে কাজ করতে পারে। সব এক শহরে কেন্দ্রীভূত করার ফলে রিয়েল এস্টেটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে।'

    ওই কর্মী জানান, তিনি বর্তমানে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। 'আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার, যদিও এখনও ঠিক কী করব, তা ভাবিনি,'- এমন অকপট স্বীকারোক্তিও ছিল পোস্টে।

    এই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ সহানুভূতি জানালেও, অনেকে তাঁর ভাবনাকে অবাস্তব বলে মনে করেছেন। এক ব্যবহারকারী লেখেন, 'যদি তুমি ভাবো নিজের ব্যবসা শুরু করলে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স ফিরে পাবে, তাহলে তুমি বড় এক ধাক্কার জন্য প্রস্তুত হও।'

    অন্য একজন মন্তব্য করেন, 'উদ্যোক্তা হওয়া ১০০ গুণ বেশি কঠিন। সব দায়িত্ব তোমার কাঁধে পড়বে। এটা ২৪/৭ এর কাজ, আর সফলতার হার খুবই কম। ভয় দেখাচ্ছি না, কিন্তু বেঙ্গালুরু এবং ভারতের স্টার্টআপ সংস্কৃতি জানো তো! বিনিয়োগ করার আগে ভালো করে ভাবো৷ জুনিয়র লেভেলের কর্মচারীর জীবন অনেক সহজ।' 

    সব মন্তব্য যে ইতিবাচক ছিল, তা নয়। কেউ কেউ তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক ব্যবহারকারী লেখেন, 'হাঁপ ধরা লাগল? পারিবারিক ব্যবসায় ফিরে যাওয়াটা তো সবার জন্য সম্ভব নয়। আর ২ বছরে ৩ টা অর্গানাইজেশনে কাজ করে চাকরির বাস্তবতা বোঝা কঠিন। যাঁরা এই পথ অনুসরণ করতে চাইছেন, সাবধান হন যদি পারিবারিক সাপোর্ট না থাকে।'

    আরেকজন মন্তব্য করে বলেন, 'তুমি যদি এমন তিনটি কোম্পানিতে কাজ করে থাকো যেগুলো খারাপ ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের জন্য কুখ্যাত, তাহলে সেটা তোমার দোষ।'

    এই মিশ্র প্রতিক্রিয়া একটি বড় সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। যেমন শহরের বহু পেশাজীবী এই ধরণের মোকাবিলা করছেন। কাজের সফলতার সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করতে ক্রমাগত পরিশ্রম করছেন।
  • Link to this news (আজকাল)