অর্ণব আইচ: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়ে প্রতারণার শিকার! এর মাধ্যমেই মোটা অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে জালিয়াতদের অ্যাকাউন্টে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে গৃহবধূরা এই জালিয়াতির শিকার হচ্ছেন। জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধের জালে। এমনই অপারাধের চক্রে জড়িয়ে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হল এক দক্ষিণ কলকাতার এক মহিলাকে। ওই মহিলার নাম রিতা বৈদ্য সেনগুপ্ত। অভিযোগ, তাঁর নামে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে এক ঋণদাতা সংস্থা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু এই বিষয়ে কিছুই জানেন না ওই মহিলা। কিন্তু ঠিক সময় মতো টাকা জমা না পারায় রিতা বৈদ্যের নামে মামলা হয় কলকাতা পুলিশে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে লালবাজার গোয়েন্দা শাখার বিশেষ আধিকারিকরা।
শুধু ওই মহিলাই নয়, সাইবার অপারাধের শিকার হয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা এক যুবক। নাম ইমরান আনসারি। একইভাবে তাঁর অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়েও মোটা অঙ্কের ঋণ নেয় জালিয়াতরা। চণ্ডীগড়ে এই অভিযোগ দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ইমরানের বাড়িতে কলকাতা পুলিশকে নিয়ে হানা দেয় ভিন রাজ্যের পুলিশ। হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও এই বিষয়ে নাকি কিছুই জানেন না ধৃত ইমরান। দু’টি ঘটনাতেই মুল মাথাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। অনুমান, এর পিছনে বড় কোনও মাথা। সেই মাথার খোঁজেই চলছে তল্লাশি।
কীভাবে ঘটছে এই জালিয়াতি? বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিককে ফোন করে সহজে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখানো হচ্ছে। তেমনই একটি ফোন যায় দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রিতা বৈদ্য সেনগুপ্তের কাছেও। তাঁকেও সহজে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলা হয়। সেই সময় রিতাদেবীর টাকার প্রয়োজন ছিল। ফলে প্রতারকাদের পাতা ফাঁদে পা দেন ওই মহিলা। পুলিশ সূত্রের খবর, এরপরেই তাঁর কাছে চেয়ে নেওয়া হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর। রিতাদেবীর নামে তৈরি করা হয় ভুয়ো নথি। যেখানে দেখানো হয় ওই মহিলা একজন বিএসএনএল কর্মী। এই সংক্রান্ত ভুয়ো পে স্লিপ থেকে শুরু করে যাবতীয় নথিও তৈরি করা হয় বলে দাবি পুলিশের। আর সেই নথি দেখিয়ে ঋণদাতা সংস্থা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও এই বিষয়ে কিছুই রিতাদেবী জানতেন না বলে দাবি।
পাঁচ লক্ষ টাকা লোন নেওয়া হলেও খুবই অল্প টাকাই অ্যাকাউন্টে পান রিতা দেবী সেনগুপ্ত। এদিকে ঋণদাতা সংস্থার খাতায় তাঁর নামে ঋণের অঙ্ক পাঁচ লক্ষ টাকা! দিনের পর দিন সেই টাকা না মেটানোয় কলকাতা পুলিশে দায়ের হয় মামলা। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে রিতা বৈদ্য সেনগুপ্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর তখনই সমস্ত কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। কার্যত একই পরিস্থিতির স্বীকার ইমরান আনসারিও। লোনের ফাঁদে ফেলে তাঁর নামেও মোটা অঙ্কের লোন নেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও একইভাবে ইমরানের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেন প্রতারকরা। আর এভাবেই ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ। চন্ডীগড় থেকে এই অপারেশন সম্পূর্ণ হয়। সেই তদন্তে নেমে সম্প্রতি চন্ডীগড় পুলিশ কলকাতায় আসে। স্থানীয় থানাকে নিয়ে অভিযুক্ত ইমরানের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ এবং গ্রেপ্তার করা হয়।
একের পর এক ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন লালবাজারের গোয়েন্দা শাখার বিশেষ আধিকারিকরা। এ বিষয়ে নাগরিকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ পুলিশ আধিকারিকদের। যাতে কেউ অ্যাকাউন্ট ভাড়া না দেন, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।