‘প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলবেন না, আমার পছন্দ নয়’ BJP বিধায়কদের কেন বললেন মমতা?
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজ বৃহস্পতিবার তিন দিনের সংক্ষিপ্ত অধিবেশন শেষ হল রাজ্য বিধানসভায়।বাংলা ভাষার অপমান এবং বাঙালিদের হেনস্থার বিরুদ্ধে এদিন ফের আলোচনা হয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। তবে এদিনের অধিবেশন শুরু থেকেই উত্তর তো হয়ে ওঠে বিধানসভা চত্বর। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখা শুরু করতে বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বিরোধীরা। এদিনের অধিবেশনে বাঙালিদের হেনস্থা থেকে শুরু করে একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপিকে তুলনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, বিজেপির বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। তিনি দাবি করেন, এখন সময় এসে গিয়েছে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার।
বিমা থেকে জিএসটি প্রত্যাহার প্রসঙ্গ নিয়েও আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, বিমা পরিষেবার ওপর জিএসটি চাপানো অন্যায় ছিল। রাজ্যের চাপেই কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
বিজেপিকে চোর বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে। বিজেপি চোর না ডাকু, ডাকাত?’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে দেশকে ছোট করার অভিযোগ তোলেন তৃণমূল নেত্রী। নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে মমতা অভিযোগ তোলেন, বিদেশ সফরে মাথা নত করে দেশের সম্মান বারবার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। রাশিয়া, আমেরিকা, ইসরায়েল, চিন সব জায়গাতেই দেশকে ছোট করা হচ্ছে।
বিজেপিকে আরও আক্রমণ শানিয়ে রাবণের সঙ্গে তুলনা করেছেন মমতা।
এদিন বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়েও সরব হন মমতা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত নাগরিকদের রেশন, সাংবিধানিক অধিকার ও নাগরিকত্ব কি নিশ্চিত করা হবে? তিনি স্পষ্ট বলেন, সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে দেবেন না।
বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার বার্তা দিয়ে ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, যে সমস্ত বিধায়ক বা দল এই প্রস্তাবে সমর্থন করবেন না। তাঁদের বাংলা-বিরোধী হিসেবে গণ্য করা হবে।
মতুয়া ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার বক্তব্যে। কোচবিহারে রাজবংশী সম্প্রদায়ের গ্রেফতারি এবং মতুয়াদের ওপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করেন।
বাংলা বিরোধী রাজনীতি প্রসঙ্গে মমতার অভিযোগ, বিজেপি বাংলা বিরোধী রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, তৃণমূল কোনও ভাষার বিরুদ্ধে নয়, তবে বাংলার অস্তিত্ব ও সম্মানকে আঘাত করা হলে তার জবাব দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিজেপি ইংরেজদের মতোই বিভাজনের রাজনীতি করে দেশকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাকে আলাদা করার ষড়যন্ত্রও হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। তিনি রামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির নাম টেনে বলেন, তাঁদের আদর্শ থেকে এক ইঞ্চিও সরবে না রাজ্য। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও ভাষাকে অপমান করতে পারি না এঁরা যে আচরণ করলেন, তা বিধানসভার ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায়।’
এর পাশাপাশি দলবলদু নেতাদেরও সতর্ক করেছেন তিনি। বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের উদ্দেশে তিনি জানান, তাঁরা ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত থেকে বাঁচতে এবং অর্থের সুরক্ষার জন্য দল পাল্টেছেন।
এদিকে, বিধানসভায় অধিবেশনে বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দেন, চাকরি চোর গদি ছোড়। এর উত্তরে মমতার মন্তব্য, এই স্লোগান শুনে মনে হচ্ছে বিজেপি নিজেরাই প্রধানমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলছেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, নিজের দলের নেতা বা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলা তাঁর পছন্দ নয়। মমতা বলেন, ‘মোদীকে চোর বলবেন না। আপনাদের লজ্জা করা উচিত। আপনারা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলছেন। আমি মোদীজিকে বলব আপনাদের দল থেকে তাড়িয়ে দিতে। আপনাদের স্লোগান শুনে মনে হচ্ছে মোদীকে চোর বলছেন। এটা শুনতে আমার ভাল লাগছে না।’
বিধানসভা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ না করতে নিজের বিধায়কদের কড়া নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ নিয়ম না মানলে স্পিকারকে অনুরোধ করবেন তাঁদের সাসপেন্ড করতে। নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন কবীর, নির্মল ঘোষের মতো নেতাদের তিনি প্রকাশ্যে ধমক দেন।
বক্তব্যের শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে সরাসরি ‘বাংলা বিরোধী’ আখ্যা দেন এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন।