• হিমাচল প্রদেশে কুল্লুতে ভয়াবহ ভূমিধস, সাত কাশ্মীরি শ্রমিকের মৃত্যু...
    আজকাল | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ ছোবলে কেঁপে উঠল হিমাচল প্রদেশের কুল্লু জেলা। বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঘটে যাওয়া এক বিশাল ভূমিধসে অন্তত সাতজন কাশ্মীরি শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে। ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও কয়েকজন, অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    ধ্বংসস্তূপে তৎপর উদ্ধার অভিযান চলছে বলে জানা যাচ্ছে। কুল্লুর দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ও স্থানীয় প্রশাসন। ভূমিধসে দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এনডিআরএফ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং একজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও প্রায় ১২–১৩ জনের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। দুর্গম ভূখণ্ড ও অবিরাম ধসকবলিত মাটি উদ্ধারকার্যের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    নিহতরা সকলেই কাশ্মীরের বাসিন্দা বলে জানা যাচ্ছে। কুল্লু প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতরা সকলেই জম্মু ও কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলার তুলাইল এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা জীবিকার সন্ধানে হিমাচলে এসেছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। এই মৃত্যুর খবরে তাঁদের পরিবার ও গ্রামাঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

    এই ঘটনায় জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “কুল্লুতে ভূমিধসে প্রাণ হারানো আমাদের প্রিয় রাজ্যের বাসিন্দাদের মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। তাঁদের পরিবারকে আমরা সম্ভাব্য সব সাহায্য দেব।” মুখ্যমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, কুল্লুর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

    অন্যদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা ত্রিকূট পাহাড়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার মতোই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতিরিক্ত প্রধান সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটি ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় এড়ানোর কারণ ও ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবে।

    টানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হিমাচল ও কাশ্মীর। সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু–কাশ্মীর দুই রাজ্যই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে। গত ১৪ আগস্ট জম্মু–কাশ্মীরের কিশতওয়ার জেলার চশোটি গ্রামে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ৬৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই মাচাইল মাতা যাত্রার তীর্থযাত্রী ছিলেন। ২৬ আগস্ট রেয়াসি জেলার ত্রিকূট পাহাড়ে ভূমিধসে অন্তত ৩৫ জন বৈষ্ণো দেবী যাত্রার তীর্থযাত্রী প্রাণ হারান। তখন যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলেও অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন পথে একটি শিবিরে, যা মুহূর্তেই ধসে পড়ে।

    হিমাচল প্রদেশের কুল্লুর এই ভূমিধস আবারও প্রমাণ করল, পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করা মানুষের জীবন কতটা অনিশ্চিত। একের পর এক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জম্মু–কাশ্মীর ও হিমাচলের সাধারণ মানুষ। নিহত শ্রমিকদের দেহ দ্রুত তাঁদের গ্রামে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। তবে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—প্রশাসনিক অব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই কি এত প্রাণহানি হচ্ছে?
  • Link to this news (আজকাল)