আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৫ অগাস্ট লালাকেল্লার ভাষণ থেকে জিএসটি কর-কাঠামোয় সংস্কারের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রক সূত্রে খবর, মোদির সেই ঘোষণা মোটেই অপ্রাত্যাশিত ছিল না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী গত আট মাস ধরে সংস্কারের কাজের তদারকি করেছেন। তবে, নয়া কর-কাঠামো কার্যকরে বড় বাধা ছিল রাজ্যগুলিকে, বিশেষ করে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলির সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি। চিন্তা ছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বাম-শাসিত কেরল, আম আদমি পার্টির পাঞ্জাব এবং কংগ্রেসের কর্ণাটকের সমর্থন আদায়।
কিন্তু জিএসটি সংস্কারে প্রত্যাশার চেয়েও সহজে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সমর্থন মিলেছিল। দুই দিনের জিএসটি বৈঠক এক বৈঠক শেষ হয়েছিল নির্বিঘ্নে। সেখানে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলি জিএসটি হ্রাসে সম্মত হয়েছিল। বৈঠকের পরে অর্থমন্ত্রী সীতারমন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন যে, সমস্ত সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে নেওয়া হয়েছে, কোনও রাজ্যের সঙ্গে জিএসটি কর সংস্কার নিয়ে কোনও মতবিরোধ নেই।
প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্য ছিল সহজ, মধ্যবিত্তদের বড় ধরনের স্বস্তি দিতে হবে। রাজ্যগুলিকেও আশ্বস্ত করা উচিত এবং ফেডারেল কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ দূর করা উচিত।
গত ছয় মাস ধরে একাধিক বৈঠকে জিএসটি কর-পুনর্গঠনের ধারণাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল, কর স্ল্যাবের পরিমার্জন। এক সরকারি সূত্র এনডিটিভি-কে জানিয়েছে যে, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি প্রাথমিকভাবে তাদের রাজস্ব হ্রাসের আশঙ্কায় ছিল। গতকাল জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে বাংলা-সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজ্য তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। বিজ্ঞান ভবনে এই জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক সন্ধ্যা ৭সাতটায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাত ৯.৩০ পর্যন্ত তা চলে, যতক্ষণ না সমস্ত রাজ্য একমত হয়।
নির্মলা সীতারামন রাজ্যগুলিকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, জিএসটি আদায় কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে হবে। যদি রাজ্যগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তবে কেন্দ্রও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি প্রদানের লক্ষ্যে, রাজ্য এবং কেন্দ্রকে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। তিনি রাজ্যগুলিকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, রাজ্যগুলির স্বার্থ দেখা হবে।
সূত্রগুলি জানিয়েছে যে, পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গ গতকাল ম্যারাথন কাউন্সিলের বৈঠকের শুরু থেকেই কর-সংস্কারে সহমত জানিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এর থেকে কিছুটা সুবিধাা আদায় লক্ষ্য করেছেন। জিএসটি কর সংস্কার ঘোষণার পর তৃণমূল জানিয়েছে, কিছু পরিবর্তন আট বছর আগে তিনি যা চেয়েছিলেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কিন্তু কর্নাটক এবং কেরল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনড় ছিল। তারা চেয়েছিলেন রাজস্ব ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে রাজ্যগুলিকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেওয়া হোক। তারাও চেয়েছিলেন আলোচনাটি পরের দিন পর্যন্ত স্থগিত করা হোক। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যগুলি অচলাবস্থায় বিরক্ত হয়ে পড়ে। ছত্তিশগড়ের অর্থমন্ত্রী ওপি চৌধুরী বলেন, যদি কর্নাটক এবং কেরল প্রস্তুত না হয়, তাহলে বিষয়টি কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা উচিত।
জিএসটি কাউন্সিলে সাধারণত ঐক্যমত্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং লটারির উপর ২৮ শতাংশ জিএসটি ইস্যুতে ভোটগ্রহণ করতে হয়।ছত্তিশগড়ের অর্থমন্ত্রী ওপি চৌধুরী বারবার জোর দিলে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অনিচ্ছুকৃতভাবেই রাজি হন। এতে, বাংলা হস্তক্ষেপ করে। কর্নাটক এবং কেরলকে সহমত হতে রাজি করায়। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
জিএসটি কাউন্সিল বর্তমান চারটি স্ল্যাব - ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ শতাংশ। সংস্কারের পর পাঁচটি থেকে থেকে দু'টি কর-হারের কাঠামো, ৫ এবং ১৮ শতাংশে জিএসটি বাতিল বলে জানানো হয়। উচ্চমানের গাড়ি, তামাক এবং সিগারেটের মতো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য একটি বিশেষ ৪০ শতাংশ স্ল্যাব প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন হার ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
সূত্র জানিয়েছে যে, জিএসটি পুনর্গঠনের ফলে প্রথম ছয় মাসে আদায়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ফলে জিডিপি চলতি আর্থিক বছরের বাকি সময়ে কিছুটা কমতে পারে। তবে এর ইতিবাচক ফলাফল আগামীতে উজ্জ্বল। মানুষের হাতে আরও বেশি অর্থ থাকবে এবং সেই অর্থের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।