• সোহনের বিরহে মৃত্যু সোহিনীর!‌ ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে শোকের ছায়া 
    আজকাল | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কয়েক মাস আগে ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে মৃত্যু হয়েছিল একটি বয়স্ক বাঘ সোহনের। সঙ্গীর মৃত্যুতে এরপর থেকেই কিছুটা মুষড়ে পড়েছিল বাঘিনী সোহিনী। সঙ্গীর বিরহে বেশ কয়েকমাস কেটে যাওয়ার পর অবশেষে মৃত্যু হল বাঘিনী সোহিনীর। বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেলে ওই বাঘিনী হঠাৎই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর তড়িঘড়ি বনকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। শেষপর্যন্ত বাঘিনী সোহিনীকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন বনকর্মীরা। মারা যাওয়ার আগে সোহিনীর বয়স হয়েছিল ২৩ বছর। 

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে পূর্ণবয়স্ক এই বাঘিনীটির। এ বিষয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা বন বিভাগের মুখ্য আধিকারিক বা ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, বুধবার ঝড়খালীর ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে মৃত্যু হয়েছে একটি বাঘিনীর। মৃত ওই বাঘিনীর নাম সোহিনী। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে সে ভুগছিল। কয়েক মাস আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছিল সোহিনীর সঙ্গী সোহনের। সোহন এই রাজ্যের অন্যতম প্রবীণ বাঘ ছিল। সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে এসে ধরা পড়ার পর থেকেই ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র তার ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। 

    জানা গিয়েছে, মৃত্যুর দু’‌বছর আগে থেকেই সোহিনীর চোখে ছানি পড়েছিল। নানা শারীরিক সমস্যাও মাঝে মধ্যে দেখা দিত। কিন্তু বনকর্মীদের দেখভাল ও যত্নের কারণেই এতদিন জীবন কাটিয়েছে সে। বন আধিকারিকদের মতে, সাধারণত পূর্ণবয়স্ক বাঘের আয়ু ১৫ থেকে ১৬ বছর হয়। নজরদারি ও যত্নের মধ্যে থাকার জন্যই সোহিনী তার থেকেও বেশি বছর বেঁচে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সোহিনীর মৃত্যুতে এই ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে পড়ে রইল ‘‌সুন্দর’‌ আর আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে আনা অন্য একটি বাঘ। বৃহস্পতিবার বাঘিনীর দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের পর দেহটি সৎকার করবেন বনদপ্তরের কর্মীরা।

    প্রসঙ্গত, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় থাকা ঝড়খালিতে অবস্থিত বনি ক্যাম্পও এমনই এক জঙ্গল। যেখানে পর্যটকদের বন দপ্তরের কর্মীরা ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সুন্দরবনের জঙ্গলের অপরূপ দৃশ্য দেখান। মূলত, সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখার অন্যতম ‘‌ডেস্টিনেশন’‌ ঝড়খালির বনি ক্যাম্প। বন দপ্তরের পক্ষ থেকে ওই জঙ্গলের মধ্যে বেশ কয়েকটি মিষ্টি জলের পুকুর কাটা হয়েছে। সাধারণত বন্যপ্রাণীরা ওই পুকুরের জল খেতে আসে। মাঝে মাঝে ওই জলাশয়ে বাঘকেও দেখা যায়। এই কারণে সুন্দরবনের ঘুরতে আসা পর্যটকদের বাঘ দর্শনের অন্যতম ডেস্টিনেশন হয়ে গিয়েছে বনি ক্যাম্প। একটা সময় সুন্দরবনে প্রচুর বাঘ চোরাশিকারিদের হাতে মারা গিয়েছিল। এর চাইতেও বড় সমস্যা ছিল, বাঘের খাবারে মানুষের ভাগ বসানো। বাঘের যারা শিকার অর্থাৎ যাদের খেয়ে বাঘ বেঁচে থাকে, যেমন চিতল হরিণ বা শুয়োর মানুষই শিকার করে ফেলত। সুন্দরবনের যে কোনও অনুষ্ঠানে হরিণের মাংস পরিবেশন ছিল অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। ১৯৭৩ সালের পর থেকে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গিয়েছে। কমেছে বাঘ–মানুষে সংঘাত। ব্যাঘ্র প্রকল্পের মাধ্যমে সুন্দরবনে বাঘ ও মানুষের সহাবস্থান হয়েছে।

     
  • Link to this news (আজকাল)