৭৫ বছর ধরে চলছে একই রীতি, দত্ত পরিবারের তৈরি চমচম ছাড়া ভোগ হয় না দেবী চৌধুরানির
বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস, বেলাকোবা: দেবী চৌধুরানির মূর্তির সামনে নিজের হাতে তৈরি প্রথম চমচম ভোগ হিসেবে নিবেদন করেছিলেন টাঙ্গাইলের কালী দত্ত। ঘটনাটি ৭৫ বছর আগের। কালীবাবু বহুদিন হল মারা গিয়েছেন। কিন্তু আজও সেই চমচম ছাড়া বেলাকোবার শিকারপুরে সম্পূর্ণ হয় না ‘দেবী’র ভোগ।
শুধু শিকারপুর নয়, জলপাইগুড়িজুড়ে দেবী চৌধুরানি মিথ। তাঁকে ঘিরে বাসিন্দাদের মুখে মুখে বহু কিংবদন্তী। ডাকাতের গল্প, ব্রিটিশের সঙ্গে লড়াই, অ্যাডভেঞ্চার¬-রোমহর্ষক সব ইতিহাস। বেলাকোবার শিকারপুর ও মন্থনীতে পুজো হয় দেবী চৌধুরানির। দু’জায়গাতেই ভোগে অপরিহার্য হল চমচম। কালী দত্তের উত্তরসূরিদের বিশ্বাস, দেবী চৌধুরানির আশীর্বাদেই বেলাকোবার চমচম প্ল্যাটিনাম জুবিলিতে পৌঁছেও স্বমহিমায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, ওই মিষ্টির কদর আছে বিদেশেও। যাচ্ছে মার্কিন মুলুকে। এতটাই কৌলিন্য এই মিষ্টির যে, আজও উত্তরবঙ্গে কোনও সেলিব্রিটি এলে তাঁর খাবারের মেনুতে শেষ পাতে থাকেই থাকে বেলাকোবার চমচম। রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, ‘বেলাকোবার চমচম আমাদের গর্ব। একইসঙ্গে দেবী চৌধুরানি আমাদের বিশ্বাস। একে অন্যের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। দেবীর ভোগে নানা ধরনের মিষ্টি থাকে। তবে চমচম ছাড়া যেন সেই ভোগ সম্পূর্ণ হয় না।’
বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম বিশ্বে সমাদৃত। সেখানকার মিষ্টির কারিগর ছিলেন কালী দত্ত। পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় সপরিবারে তিনি চলে আসেন জলপাইগুড়ির বেলাকোবায়। মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলার পর খুঁজতে থাকেন রোজগারের পথ। কিন্তু তেমন কিছু কাজ না পেয়ে চমচম তৈরির বিদ্যেকেই কাজে লাগান ভাত জোগাড়ে। বাকিটা ইতিহাস। কালী দত্তের হাতের জাদুতে কড়াপাকের রসভরা মিষ্টির স্বাদ পান উত্তরবঙ্গবাসী। অল্পদিনেই ছড়িয়ে পড়ে বেলাকোবার চমচমের সুখ্যাতি। কালী দত্ত মারা গিয়েছেন ৪২ বছর আগে। কিন্তু চমচমের ঐতিহ্য অটুট রাখতে মরিয়া তাঁর ছেলেরা। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন মিষ্টিতেও ফিউশন। কিন্তু কালীবাবুর শিখিয়ে যাওয়া জাদুমন্ত্রে ভর করে আজও ‘সুপারহিট’ বেলাকোবার চমচম।
কালীবাবুর ছেলে সুকুমার দত্ত বলেন, ‘বহু বিখ্যাত রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের দোকানের চমচম খেয়ে তারিফ করেছেন। আজও উত্তরবঙ্গে কোনও সেলিব্রিটি বা ভিভিআইপি এলে অর্ডার হয় আমাদের চমচমের।’ তাঁর দাবি, দিল্লি-মুম্বই তো বটেই, বিদেশেও যাচ্ছে আমাদের তৈরি চমচম। বেলাকোবার চমচমের মুখে লেগে থাকার রহস্য কী! কালীবাবুর আর এক ছেলে সুধীর দত্ত বলেন, ‘বাবা যেমনভাবে শিখিয়ে গিয়েছেন, সেভাবেই তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের চমচম ভাঙলে ভিতরে মৌমাছির চাকের মতো কুঠুরি দেখতে পাওয়া যাবে। রসে টইটম্বুর থাকে ওই কুঠুরি।’ তাঁর দাবি, বেলাকোবার চমচম প্রথম খ্যাতি অর্জন করে ১৯৫০ সালে। সেই হিসেবে এবছর প্লাটিনাম জুবিলি। নিজস্ব চিত্র